অনেকেই স্ট্রিট দাওয়াহ এর সাথে যুক্ত হতে চান, যুবকদের মাঝে উপকারী বিভিন্ন দাওয়াহ মূলক লিফলেট বিতরণ করতে চান। কিন্তু, কিভাবে শুরু করতে হয় তা জানেন না। তাদের জন্য আজকের এই লেখা। খুব সংক্ষেপে কয়েকটি ধাপের মাধ্যমে ক্যাম্পেইন শুরুর প্রক্রিয়া বলে দিচ্ছি।
পুরো বিষয় কয়েকটি ভাগে ভাগ করে নিই-
১। সদিচ্ছা/নিয়াত ঠিক করা
২। নিজের এলাকা বা যেখানে কাজ করব সেখানের পরিবেশ ক্যাম্পেইনের উপযুক্ত করা
৩। প্রয়োজনীয় লজিস্টিক এর ব্যবস্থা করা
প্রথম ধাপ: নিশ্চয়ই সমস্ত কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ০১)
আমরা কেন ক্যাম্পেইন শুরু করব তা আগে ঠিক করতে হবে। এই ক্যাম্পেইন হবে শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য। আল্লাহকে খুশি করতে তার বান্দাদের পাপ কাজ থেকে বিরত রাখা এবং ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য। এই ক্যাম্পৈইনের মাধ্যমে দুনিয়াবি কোনো লাভ-ক্ষতি আমরা খুঁজব না। সেলিব্রিটি হতে ক্যাম্পেইন শুরু করব না এবং কোনো রাজনৈতিক ফায়দা লাভের জন্যেও এই ক্যাম্পেইন শুরু করব না।
প্রিয় ভাই, আজ যুবসমাজ খুব বিপর্যস্ত। আপনি একটু গভীরভাবে খেয়াল করে দেখুন, তাদের অধিকাংশই পর্নগ্রাফি, গেইম, মাদকের মতো ভয়ঙ্কর সব আসক্তিতে ভুগছে। ডিভাইস ছাড়া কিছুই বুঝে না। বাবা মা ভাই বোন কোনো কিছুর ভালোবাসাই তাদের মন ছুঁয়ে যায় না। একটা ডিভাইস না পেয়ে অভিমান করে আত্মহত্যার পথ খুঁজে নিচ্ছে অনেক কিশোর! এই কিশোররা অন্য কোনো গ্রহ থেকে আসেনি, তারা আমাদেরই ভাই-বোন। তাদের সচেতন করার দায়িত্বও তাই আমাদের। এই দায়িত্ব যারা নিতে প্রস্তুত তাদের জন্যই আমাদের ক্যাম্পেইন। একটি হাদিস মনে পড়ল, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। আর প্রত্যেকেই তার অধিনস্তদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ২৪০৯)
দ্বিতীয় ধাপ: আপনি যদি নিজের পরিবার এবং সমাজকে রক্ষায় এগিয়ে আসতে চান এবং আপনার নিয়াত যদি হয় সঠিক তাহলে এই ধাপ খেয়াল করুন।
ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা খুব কঠিন এই কথাটা সবার প্রথম মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিতে হবে। এটা খুব সহজ একটা কাজ।
লক্ষ্য করুন, ধরুন দিপু ক্লাস এইটে পড়ে। সে চাচ্ছে একটা অডিটোরিয়াম ভাড়া করে ৫০০ মানুষ দাওয়াত করে এনে ২ ঘন্টা লেকচার দিয়ে পর্নোগ্রাফির ক্ষতি সম্পর্কে বোঝাবে, এটা কি সম্ভব? অডিটোরিয়াম ভাড়া করার খরচ, ৫০০ মানুষকে দাওয়াত দিয়ে আনার মতো পরিচিতি, ২ ঘন্টা লেকচার দেওয়ার মতো যোগ্যতা সাধারণত এই বয়সী কারো মধ্যে থাকে না। এমন করে যোগ্যতা এবং সামর্থের বাইরে গিয়ে ক্যাম্পেইনের চিন্তা করলে অবশ্যই কঠিন মনে হবে।
তবে দিপু যদি ক্যাম্পেইনটা এভাবে শুরু করে তাহলে আশা করি খুব কঠিন হবে না। দিপু তার বন্ধুদের সাথে পরামর্শ করে গ্রামের/স্কুলের একজন বড় ভাই খুঁজে বের করল যিনি সামাজিক বিভিন্ন কাজের সাথে যুক্ত। লস্ট মডেস্টির লিফলেটগুলোর পিডিএফ দেখাল (লিফলেট এর হার্ডকপি থাকলে তো আরো ভালো) এবং সাথে সাথে অন্যান্য জেলার ভাইয়েরা কিভাবে ক্যাম্পেইন করছে সেটার বিভিন্ন ফটো ভিডিও দেখাল এবং বড়ো ভাইকে জানাল তারাও এই কাজ করতে চায়। তিনজন বন্ধু মিলে কিছু টাকাও (১০০ লিফলেটে রং জন্য ২০০টাকা) যোগাড় করেছে লিফলেট ছাপানোর/কেনার জন্য।
আশা করা যায় বড়ো ভাই যিনি বিভিন্ন সামাজিক কাজে যুক্ত আছেন তিনি না করবেন না। যুক্ত হয়ে যাবে তাদের সাথে। বড়ো কাউকে নেওয়ার উদ্দেশ্যে হচ্ছে বড়ো কিছু মানুষ সাথে থাকা ভালো। ভুল হলে তারা শুধরে দিবে। তারা সবসময় কাজের ভেতরে না থাকলেও অন্তত পরামর্শ সভায় রাখা উচিত।
মোটামুটি কয়েকজনের (৩ জন হলেও শুরু করতে যথেষ্ট) টিম হয়ে গেলে। এবার বুদ্ধি পরামর্শ করে দেখতে হবে আপনাদের জন্য কতটুকু করা সম্ভব। আরেকবার বলি, শুরুতেই বিশাল ক্যাম্পেইনের চিন্তা করলে শুরু করাটাই হয়তো হবে না। তাই সামর্থের কথা মাথায় রেখে ছোট করে হলেও দ্রুত শুরু করে দিতে হবে। শুরু করাটাই আসল। চলতে চলতে কাজ এমনিতেই বড়ো হতে থাকবে ইনশাআল্লাহ।
সাধারণত পরামর্শের সময় যেগুলো নিয়ে ঝামেলা হয় এমন কিছু বিষয় হচ্ছে-
অনেক সুন্দর ক্যাম্পেইনের আইডিয়া এসেছে কিন্তু:
১। টাকার সমস্যা। ক্যাম্পেইনের জন্য লিফলেট-বই কিনতে হবে টাকা নাই। যেহেতু টাকা নাই তাহলে ক্যাম্পেইন ও নাই। পরে করব টাকা হলে।
কাজ হবে না এমন চিন্তাই করা যাবে না । টাকা না থাকলে নিজেদের ভেতরে কত ম্যানেজ করা যায় তা দেখতে হবে। তারপরও টাকা না হলে বই কিনার দরকার নেই। মুক্ত বাতাসের খোঁজে বইয়ের ফ্রি পিডিএফ আছে। সবাই মিলে পিডিএফ থেকে পড়ে ক্যাম্পেইন শুরু করে দিতে পারেন।
২। ক্যাম্পেইন করার জায়গা নাই। স্কুল কলেজে অনুমতি নিবো কিভাবে ভয় হয়। থাক ক্যাম্পেইনের দরকার নাই। আমরা ছোটো, অভিজ্ঞরাই করুক।
এই চিন্তা করলে জীবনে আর বড়ো কিছু করা যাবে না। কিছু বুদ্ধি দিই এখানে। প্রথম ক্যাম্পেইন কোনো ইউনিভার্সিটি বা কলেজে করতে হবে এমন কোনো কথা নেই। আমি বলব এমন করাও উচিত না (যদি কারো পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকে এমন বড়ো জায়গাগুলোতে অন্য কোনো ক্যাম্পেইন করার তাদের কথা আলাদা। আমি এখানে নতুনদের কথা বলছি।)
জায়গার অভাব নাই দুনিয়ায়। প্রথম দিন লিফলেট হাতে নিয়ে কয়েকজন মিলে হাঁটতে বের হন। উদ্যেশ্য হচ্ছে যদি সময় সুযোগ মিলে যায় তাহলে কয়েকজনকে অল্প কিছু কথা বলে লিফলেট দিয়ে দিবেন। (কথা কী বলবে তা পরে বলে দিচ্ছি) সময় সুযোগ এজন্য বললাম, আপনি খেয়াল করবেন বের হওয়ার পর লিফলেট দিতে খুব শরম করবে। কে কী ভাববে এগুলো মনে হবে। বেশি মানুষ এলাকায় থাকলে তো কোনো ভাবেই লিফলেট বের হতে চাবে না। এতকিছুর পরও দেখবেন সুযোগে ৫/৭ জনকে ঠিকই লিফলেট দেওয়া হয়ে গেছে।
এভাবে কয়েকদিন হাঁটতে গিয়ে অপরিচিতদের মধ্যে লিফলেট দিয়ে শুরু করতে পারেন। একটু অভিজ্ঞতা এবং সাহস হলে ছোটখাটো কোচিং সেন্টারে গিয়ে ৫-১০ মিনিট যতটুকু সম্ভব হয় কথা বলে হাতে লিফলেট দিয়ে আসতে পারেন। এভাবে কিছুদিন ক্যাম্পেইন করার পর স্কুল কলেজে গিয়ে অনুমতি নেওয়া যেতে পারে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুমতি চাওয়ার সময় সমাজের বিভিন্ন শ্রেনীর ৩-৪ জন মিলে যাওয়া ভালো। যেই প্রতিষ্ঠানের অনুমতি চাইতে যাবেন, যাওয়ার আগে সেখানকার কমিটির লোক বা সমাজের কোনো মুরব্বি মানুষকে সাথে নিলে কাজ অনেক সহজ হবে। ইনশাআল্লাহ। আমার নিজের কয়েকটা স্কুলের অনুমতি চাওয়ার অভিজ্ঞতা আছে। আলহামদুলিল্লাহ কোন স্কুল থেকে আমাদের ক্যাম্পেইনে বাধা দেওয়া হয়নি। স্কুল কর্তৃপক্ষ এই কাজের গুরুত্ব খুব সহজেই বুঝতে পেরেছিলেন। আশাকরি আপনারাও গুরুত্ব বোঝাতে পারলে অনুমতি পেয়ে যাবেন।
তৃতীয় ধাপ: ক্যাম্পেইন শুরু করতে টাকা পয়সা তেমন লাগে না বললেই চলে। একদম ফ্রিতেই ক্যাম্পেইন করা যায়, সচেতন করা যায়। আরেকটু বিস্তারিত বলি, ক্যাম্পেইনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে কোনো বিষয় সম্পর্কে মানুষকে কিছু জানান এবং জনসচেতনতা তৈরি করা। এখন চাইলেই তুমি মুক্ত বাতাসের খোঁজে বইটা ফ্রিতে ডাউনলোড করার পর পড়ে পর্নোগ্রাফি সম্পর্কে মোটামুটি জ্ঞান নিতে পারবে এবং আল্লাহর দেওয়া ফ্রি সাউন্ডবক্স ব্যবহার করে মানুষকে সচেতন করতে পারবে।
ভলান্টিয়ার ভাইয়েরা মিলে অল্প কিছু টাকার ব্যবস্থা করতে পারলে লস্টমডেস্টির লিফলেটগুলো ছাপিয়ে বা অর্ডার করে বিতরণ করতে পারবেন। আমাদের পরামর্শ থাকবে আপনারা এই টাকা নিজেরাই ব্যবস্থা করে সংগ্রহ করবেন। ভলান্টিয়ারদের বাইরের কেউ টাকা দিয়ে সাহায্য করতে চাইলে শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় জিনিস তার থেকেই কিনে নিবেন এবং হিসাব খুব ক্লিয়ার রাখবেন। যানেন-ই তো টাকার কেলেংকারি খুব খারাপ জিনিস।
সারসংক্ষেপ:
১। ক্যাম্পেইনে দুনিয়াবি ফায়দা খোঁজা যাবে না
২। ক্যাম্পেইনের আগে এলাকার মুরব্বিদের জানান এবং স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে ক্যাম্পেইনের আগে যথাথত কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়া
৩। ভলান্টিয়ারদের পরামর্শক্রমে ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা এবং পরামর্শ সভায় বড়ো বুঝদার কাউকে রাখা
৪। টাকা পয়সার লেনদেন সাবধানে করা এবং সম্পূর্ণ হিসাব রাখা