নির্বাচন শেষ। মানুষের আনাগোণা আবারো বেড়েছে রাস্তায়। আশা করা যায়, আপাতত কিছুদিন ইনশাআল্লাহ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা থাকবে না। সেক্ষেত্রে দেশজুড়ে যে এক্টিভিস্টরা ট্র্যান্স ইস্যু নিয়ে কাজ করছেন, তারা নতুনভাবে প্ল্যান করতে পারেন।

গত কয়েকমাসে আলহামদুলিল্লাহ সবার প্রচেষ্টার ফলে অবস্থার বেশ উন্নতি হয়েছে। একেবারে শিশু অবস্থায় আর ট্র্যান্স ইস্যুটা নেই। যার কারণে এখন আরো জোরদার এক্টিভিজম করতে পারার কথা। মোটামুটিভাবে কিছু অগ্রগতী হলো-

  • দেশবরেণ্য উলামাদের ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা
  • বড় বড় প্রতিষ্ঠান থেকে আসা ফাতওয়া
  • বড় ট্র্যান্স এক্টিভিস্ট ও প্রতিষ্ঠানের গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট হওয়া
  • বেশ কিছু স্থানে লিফলেট বিতরণ, সেমিনারসহ নানা এক্টিভিজম
  • দেশের কয়েক পার্সেন্ট মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারা

এ অবস্থাকে সামনে রেখে প্লাস কিছু নতুন ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ বছরের এক্টিভিজমগুলো সাজানো যেতে পারে। তার মধ্যে আপাতত কিছু কাজ মাথায় আসছে-

১. পাঠ্যপুস্তকে ট্র্যান্স ও ঢাবিতে ট্র্যান্স কোটা- এ বিষয়গুলো নিয়ে প্রতিবাদ, মানববন্ধন করা যেতে পারে। প্রতিবাদের সময় তরুণ-যুবকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা ও প্রতিবাদের গ্রাউন্ড পরিষ্কার রাখা বেশ জরুরি। যেন ব্যাপারটাকে অন্য খাতে না নেওয়া যায়।

২. আসিফ আদনান ভাইয়ের ‘অভিভাবকদের প্রতি’ লিফলেটটি নিজের বাবা-মা, ফুফু-ফুপা, খালা-খালু, টিউশনের ছাত্রের বাবা-মা, আঙ্কেল-আন্টিদেরকে ব্যাপকভাবে দিন। বিবাহিত বড় ভাই-বোন থাকলেও। দরকার হলে কলিগদেরকে দিতে বাবার হাতেও কিছু লিফলেট ধরিয়ে দিন।

৩. যে এলাকার মসজিদগুলোতে যাওয়া হয়নি, সেগুলো টার্গেট করে যান। এবার আগের চেয়ে কষ্ট কম হওয়ার কথা। যার যার অবস্থান বুঝে হাটহাজারি, আত তাহরিক বা মুফতি আব্বাসীর ফাতওয়ার কপি ধরিয়ে দেবেন। সাথে হালকা করে বুঝিয়ে দেবেন এর ভয়াবহতা ও বাংলাদেশে এর অবস্থা।

৪. এলাকার ও ভার্সিটির বোনেরা নিজেদের আশেপাশের দ্বীনি বা দ্বীনের প্রতি ভালোবাসা আছে এমন বোনদেরকে নিয়ে সার্কেল করুন। এগুলো বোঝান। এখানে দুটো লাভ। এক. মা বুঝলে স্বামী-সন্তানদের কানেও যাবে, দুই. এখানে সবচেয়ে বড় সাফারার হবে নারীরাই। তাদের সচেতনতা বেশ জরুরি।

৫. পরিস্থিতি বুঝে সার্ভে, স্ট্রিট সার্ভে, পোস্টারিং, দেয়াললিখনের মত ভিজিবল কিছু কাজ করুন। এভাবে সাধারণ মানুষ ট্র্যান্স বিরোধিতাকে একটা মোটামুটি মেইনস্ট্রিম ভয়েজ হিসেবে দেখবে। তারা আরো জানতে উদ্বুদ্ধ হবে। ‘সুবোধ’ এর মত কিছুই ইউনিক আইডিয়া এক্ষেত্রে আসতে পারে।

৬. ট্র্যান্স, বিশেষ করে পাঠ্যপুস্তকে ট্র্যান্স নিয়ে হালাকাহ/সেমিনার ইত্যাদির আয়োজন করুন। চেষ্টা করবেন অন্তত একজন প্রফেশনালস কাউকে রাখার। এটাতে ব্যাপকভাবে তরুণ-যুবকের সাথে সাথে আঙ্কেল-বাবাদের বয়সী মানুষদেরকেও আনার চেষ্টা করবেন। এলাকার মুরুব্বিদের সাহায্য নিন প্রয়োজনে।

৭. জুমার পরে মসজিদের সামনে, স্কুল ছুটির সময়ে গেইটে একটা ব্যানারে সংক্ষেপে ব্যাপারটা লিখে লিফলেট বিলির কাজ করুন। লিফলেট অনেকে না পড়লেও দেখবেন আগ্রহ নিয়ে অনেকেই ব্যানারের লেখা পড়ছে। প্রশ্ন করলে আগ্রহের সাথে বোঝাবেন। দেখবেন আশেপাশে লোক জড়ো হয়ে শুনছে।

৮. ক্লাস সিক্স থেকে ক্লাস নাইনের তরুণদেরকে নিয়ে খেলার মাঠে, কোচিং এ, স্কুল ছুটির পরে পাঠ্যপুস্তকের ব্যাপারগুলো নিয়ে গোল হয়ে বসে আলোচনা করুন। শিক্ষকরা এসব মাথায় ঢোকানোর আগে আপনি তাদেরকে সঠিকটা শিখিয়ে দিন। তাদেরকে ‘দায়িত্ব’ দিন বাকি বন্ধুদের কাছে প্রচারের।

৯. শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে ক্ষেপে থাকা গার্ডিয়ানদের মাথায় এই ট্র্যান্স ইস্যুটাও দিয়ে দিন। যিনা এবং সমকামিতার সাথে মিলিয়ে বলুন। অন্তত ১০০-২০০ ভাইবোন মিলে গার্ডিয়ানদেরকে সফলভাবে বোঝালেও এটা বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থাবিরোধী আন্দোলনের সেন্টার একটা দাবি হিসেবে এসে যেতে পারে ইনশাআল্লাহ।

১০. নিজেদের প্রাক্তন স্কুল/কলেজে যান। ধরুন আপনি টপার ছিলেন, সেক্ষেত্রে টিচারদের সাথেও ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করুন। এলামনাইদের প্রোগ্রামের মত করে ক্যারিয়ার, নৈতিকতা ইত্যাদি আলোচনায় এ ব্যাপারগুলো নিয়েও সবিস্তারে আলোচনা করুন। সিনিয়রদেরকে গুরু মানে জুনিয়ররা।

যে কাজগুলোতে সম্ভব সেগুলোতে অবশ্যই কাজের ভিডিও করবেন, ছবি তুলবেন, পোস্ট করবেন।

এ বছরটাকে ট্র্যান্স নিয়ে কাজের বছর হিসেবে নিন। এ বছরেই আইন পাশ হতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই আইনি বৈধতা ছাড়াই এসব এনজিও, প্রতিষ্ঠান, এক্টিভিস্টরা যে পরিমাণ এগিয়ে গেছে, আইনি বৈধতা পেলে কী করবে তা ভাবা যায় না। আমরা ইতিমধ্যেই অনেক পিছিয়ে। আমাদের নাকের ডগাতেই খসড়া হয়ে সচিবালয়ে চলে গেছে।

তাই বসে থাকার সুযোগ নেই। দ্রুত কাজ করতে হবে, এগিয়ে যেতে হবে। আইন পাশ যদি আমরা ঠেকাতে নাও পারি, তাও সামাজিকভাবে এমন প্রতিরোধ তৈরি করতে হবে যেন তারা আমাদের সমাজে ঠাই না পায়। আইন যেন কিছু কালির দাগ হয়েই বইয়ের পাতায় পড়ে থাকে। রোগী চিকিৎসা পাবে, স্বাভাবিক হিসেবে স্বীকৃতি পাবে না।

সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখালেখি ও অল্প কিছু এক্টিভিজম দিয়ে আল্লাহ এতোটা সফলতা দিয়েছেন। সঠিকভাবে লেগে থাকতে পারলে এবং আল্লাহর সাহায্যের যোগ্য প্রমাণ করতে পারলে আল্লাহ আমাদেরকে অবশ্যই সফলতা দান করবেন। আমাদের হারানোর অনেক কিছু আছে, এখনই লেগে না পড়লে অনেক বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে।

আলসেমি ও অবহেলা বাদে আর কোনো যুক্তিই নেই বসে থাকার।