জীবনের একটা বছর, জীবনের সবচেয়ে সজীব, সবচেয়ে উচ্ছল বছরগুলোর পুরো একটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফেরি করে বেড়ানো এক গ্রুপের পেছনে নষ্ট করেছিলাম (কিছুটা কমিউনিস্ট ঘেঁষা ছিলাম সেই সময়টাতে)। খুব আন্তরিকভাবে চেয়েছিলাম কিছুটা হলেও এলাকার উন্নয়ন হোক। এবং আন্তরিকতার সাথেই চেষ্টা করেছিলাম কিছু করার। যে সময়টাতে আমার বন্ধুবান্ধবেরা ট্যুর দিয়ে বেড়াতো, সেই সময়টাতে আমি জনসেবা (আমি অন্তত তাই ভাবতাম) করে বেড়াতাম। বাবা মায়ের বকুনি খেয়েও পিছপা হইনি।
আমার এই আন্তরিকভাবে পরিশ্রম করার ফলাফল হাতেনাতেই পেয়েছিলাম। গ্রুপ থেকে বের হয়ে যেতে হয়েছিল। এবং একজন বেশ হুমকির সুরেই কড়া কড়া কথা বলেছিল। যাদের কাছে খুব প্রিয় ছিলাম নিমিষেই তারা দূরে সরিয়ে দিয়েছিল। আমার দোষ ছিল আমি তাদেরই একটা ক্লোজ গ্রুপে কিছু বিষয়( যৌক্তিক বিষয়) নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলাম।
একটা বছর, দীর্ঘ সেমিস্টার ব্রেক, মিড ব্রেক, ঈদের ছুটির বন্ধ সব কিছু এঞ্জয় করা বাদ দিয়ে যাদের জন্য কাজ করেছিলাম তারা নিমিষেই আমাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল। মন খারাপ হয়েছিল। অভিমান হয়েছিল। মন খারাপ কাটলেও, অভিমান এখনো আছে।
একটা বছরের পরিশ্রম নষ্ট । নষ্ট বললে ভুল হবে। ইসলাম নিয়ে সিরিয়াস চিন্তা ভাবনা শুরু করেছিলাম তখন থেকে । আর আমি আমার জীবনের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা তো এর মাধ্যমেই পেয়েছিলাম।
দেখুন, ভাই আপনি যদি মানুষের জন্য কিছু করেন, তাহলে আপনি সেটার প্রতিদান পেতেও পারেন । নাও পেতে পারেন।কিন্তু আল্লাহ্র জন্য করলে অবশ্যই অবশ্যই সে কাজের প্রতিদান পাবেন। ধরেন আপনি দুনিয়াবি কোন বিষয়ে কোন কাজ করলেন। ধরেন, আপনি শীতার্তদের জন্য বাড়ি বাড়ি ঘুরে কম্বল সংগ্রহ করলেন। আপনার ইচ্ছা , পঞ্চগড়ের শীতার্ত মানুষদের শীতবস্ত্র বিতরণ করা। এখন পঞ্চগড় যাবার পথে এক্সিডেন্ট হল। গাড়িতে আগুন লেগে সব কম্বল পুড়ে গেল। তাহলে আপনার এই দীর্ঘ পরিশ্রমের কোন ফল আপনি পেলেন?
অথচ এই কাজটিই যদি আপনি করতেন আল্লাহ্কে সন্তুষ্ট করার জন্য, তাহলে কম্বল সংগ্রহ করা দূরে থাক, যেই মুহূর্তে আপনি নিয়্যত করেছেন সেই মুহূর্ত থেকেই আপনি সওয়াব পাওয়া শুরু করেছেন। কাজ বাস্তবে হল কি হলনা সেটি বিষয়না।
ভাই, আপনি যদি আল্লাহর জন্য কিছু করেন, তাহলে আপনার পরিশ্রম কখনোই বৃথা যাবেনা। কখনোই না। খুব ক্ষুদ্র কাজও যদি আপনি করেন তাহলেও আপনি সেই কাজের প্রতিদান পাবেন।
দুনিয়াবি কাজের মতো না। আপনি পরিশ্রম করার পরেও ব্যর্থ হতে পারেন, আপনার পরিশ্রমের ফসল অন্য কেউ ঘরে তুল্তপে পারে, আপনি খাটবেন আর অন্য কেউ আপনার ক্রেডিট নিতে পারে, আপনাকে কেউ তার নিজের স্বার্থে ব্যবহার করতে পারে, প্রয়োজন শেষে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলতে পারে। কিন্তু দ্বীনের কাজে সমীকরণটাই আলাদা। যদি আপনি আন্তরিক থাকেন, আপনার নিয়্যত ঠিক থাকে তাহলে আপনি মানুষের কাছে স্বীকৃতি পেলেন কি পেলেন না, আপনি কাজে সফল হলেন কি হলেন না এগুলোর কোন কিছুরই বেইল নাই। আপনি পুরষ্কার পাবেনই। পাবেনই।
আল্লাহ্ কক্ষনোই কারো প্রতিদান নষ্ট করেননা।
আমি মনে হয় ঠিকভাবে বোঝাতে পারলাম না। ভাই আপনার এই জীবন, এই ইসলাম আল্লাহর দেয়া সবচেয়ে বড় নিয়ামত। ভুলেও এই জীবন এমন কিছুর পেছনে ছুটে বেড়িয়ে নষ্ট করবেন না যা আপনাকে দিনশেষে ধোঁকা দিবে। আপনাকে চুষে খাবে। এমন লোকদের থেকে শতহাত দূরে থাকুন যারা আপনাকে ওপরে ওঠার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করে।
ইয়া আল্লাহ্! আপনি আমাদের অন্তরগুলো খুলে দিন। আমাদের এমন এক জান্নাতের পানে দৌড়ানোর তৌফিক দিন যার প্রশস্ততা আকাশ ও জমিনের সমান।
অনেক আগের লেখা। জুলাই বেহাত হয়ে যাওয়া, জুলাই-এর বীর আবু সাইদদের সাথে গাদ্দারি করার চেষ্টা দেখে মনে পড়ল।