খুব স্মৃতিকাতর হয়ে সে বলল- “তোমার মনে আছে পার্টিতে আমাদের জীবন কেমন ছিল? সকালে ঘুম থেকে উঠতাম আমি । দাড়ি গোফ কামানোর সময় মাথায় একটাই চিন্তা ঘুরত- আজ আমি কমিউনিজমের জন্য কি কি করব। নাস্তা করার সময় পার্টির পত্রিকা ডেইলি ওয়ার্কার খুটিয়ে খুটিয়ে পড়তাম। পুঁজিবাদী বিশ্বের সাথে যুদ্ধের রসদ যোগাতাম যেন। পত্রিকার প্রত্যেকটি লাইন পড়তাম আর ভাবতাম কীভাবে আমি এগুলো কমিউনিজমের জন্য কাজে লাগাব”।

“আমি আসলে কখনোই খেলাধুলার প্রতি আগ্রহী ছিলাম না। কিন্তু এরপরেও খেলাধুলার পাতা পড়তাম। যাতে অন্যদের সাথে খেলাধুলা নিয়ে আলাপ আলোচনা করতে পারি। এবং তাদের বলতে পারি- তুমি কি ডেইলি ওয়ার্কার পত্রিকায় এটা পড়েছ? এরপর তাদেরকে ডেইলি ওয়ার্কার পত্রিকার একটা কপি দিতাম। এই আশায় যে হয়ত তারা খেলাধুলার পাতা থেকে রাজনীতির পাতাতেও যাবে। সে পাতার লেখাগুলোও পড়বে।”

“বাসে বা ট্রেনে চড়ে অফিসে যেতাম। অফিসে যাবার পথে এমনভাবে উচু করে ধরে পার্টির পত্রিকা পড়তাম যেন অন্যরা সহজেই সংবাদ শিরোনামগুলো পড়তে পারে। হয়ত শিরোনামগুলো পড়ে তারা প্রভাবিত হবে। সবসময় দুই কপি পত্রিকা রাখতাম আমি । বাস বা ট্রেন থেকে নামার সময় এক কপি সিটে রেখে আসতাম। হয়ত কেউ সেটা পড়বে এই আশায় ”

“ অফিসে পৌঁছে গিয়েও ডেইলি ওয়ার্কার বিতরণ করতাম।শ্রমিকেরা একে একে আমার কাছ থেকে পত্রিকা নিয়ে বাইরে যেত, কিছু সময় পড়ত এরপর আমাকে ফিরিয়ে দিত। দুপুরে খাবার সময় ক্যান্টিন বা রেস্টুরেন্টে অন্যদের সাথে কথোপকথন চালানোর চেষ্টা করতাম। বিভিন্ন স্তরের মানুষদের সাথে বসে লাঞ্চ করার অভ্যাস করেছিলাম । যেন যতোবেশী সম্ভব মানুষের চিন্তাভাবনাকে প্রভাবিত করতে পারি। কমিউনিজম, চামুচে করে মুখে তুলে তাদের গিলিয়ে খাওয়াতাম না। তবে এমন ভাবে কথোপকথ চালাতাম যেন আলোচনার মোড় ঘুরে ফিরে রাজনীতির দিকে যায়। অথবা সম্ভব হলে পার্টি সে সময় যে ক্যাম্পেইনগুলো পরিচালিত করছিল সেগুলো নিয়ে কথা উঠে। ”

“ রাতে বাসায় ফেরার পূর্বে সংক্ষিপ্ত একটা মিটিং হতো। কারখানার সেল বা দলের সাথে। সেদিনের সফলতা ও ব্যর্থতা নিয়ে কয়েক মিনিট আলোচনা করতাম আমরা। পরের দিন আমরা কি কি করার আশা রাখি তা নিয়েও আলাপ হতো”

“দ্রুত গতিতে বাসায় ফিরতাম, চটজলদি নাস্তা সেরেই আবার বেরিয়ে পড়তাম। হয়ত কোনো ক্লাস করতে অথবা কোনো ক্লাস নিতে বা কোনো ক্যাম্পেইনে যোগ দিতে। মানুষের দরজায় দরজায় ঘুরে কমিউনিজমের পক্ষে প্রচারণা চালাতাম কিংবা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে পার্টির পত্রিকা বিক্রি করতাম। অর্থাৎ কোনো না কোনোভাবে কমিউনিজমের জন্য কিছু করতাম। রাত করে বাসায় ফিরতাম। আর স্বপ্ন দেখতাম আগামীকাল কমিউনিজমের জন্য কি কি করব!

দুঃখভারাক্রান্ত কন্ঠে সেই কমরেড বলল, ‘আসলে জানো, সেই দিনগুলোতে জীবনের অর্থ ছিল, উদ্দেশ্য ছিল। কমিউনিস্ট পার্টিতে জীবন বেশ ভালো ছিল’।


সাবেক কমিউনিস্ট ডগলাস হাইডের একটা বই পড়ছিলাম। সেখান থেকে অনুবাদ করা। কমিউনিস্টরা (বাংলাদেশের না) যে মাত্রায় তাদের ভ্রান্ত আকীদার উপর নিবেদিত, চির সফলতার পথ ইসলামে আমরা কি সেভাবে নিবেদিত?