নব্য মিশনারীরা সমাজ, দেশ ও মানব সভ্যতা বিরোধী বিকৃত ট্রান্সজেন্ডার মতবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে কাজে লাগাচ্ছে মানুষের অজ্ঞতাকে। হিজড়া এবং ট্রান্সজেন্ডারকে এক হিসেবে দেখাচ্ছে। অথচ দুটির মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য। এ ব্যাপারে আমরা আগের পোস্টে আলোচনা করেছি। এই জঘন্য মতবাদ মোকাবেলার এখনই যদি আমরা মাঠে না নামি তাহলে এ সমাজ, এদেশ ধ্বংস হয়ে যাবে। আমাদের সর্ব প্রথম দরকার সমাজের মানুষকে প্রকৃত বাস্তবতা জানানো। এই কাজটি কিভাবে করা হবে?

১। অনলাইন খুব ভালো প্ল্যাটফর্ম হতে পারত। কিন্তু ফেইসবুক,ইউটিউব বা অন্যান্য সোস্যাল মিডিয়াগুলো এ সংক্রান্ত আলোচনার রিচ কমিয়ে দেয়। এরপরেও আমরা অনলাইনে এটা নিয়ে সোচ্চার থাকব ইনশা আল্লাহ। কি ওয়ার্ডগুলো ভেঙ্গে ভেঙ্গে লেখব। টেলিগ্রামে প্রচার করব। দ্বীনি বা সাধারণ সেলিব্রেটি সহ অনলাইনে যারা প্রভাবশালী আছে তাদের সবাইকে আমরা মেসেজ,কমেন্ট বা অন্য যেকোনো উপায়ে পারি অনুরোধ করব এই বিষয় নিয়ে সোচ্চার হতে। প্রথম আলো বা ডেইলিস্টারের মতো সমাজ বিরোধীরা এর পক্ষে অনলাইনে যেসব পোস্টে বা ভিডিওতে প্রচারণা চালাবে আমরা দলবেঁধে সবাই গিয়ে সেখানে ওদের মুখোশ খুলে দেব। তবে এসব কাজের পাশাপাশি আমাদের বর্তমান সময়ে মূল ফোকাসটা রাখা উচিত অফলাইনে।

২। অফলাইনে সচেতনতামূলক কার্যক্রমের কথা বললেই আমাদের মাথায় চলে আসে লিফলেট বিতরণের কথা। আমরা এতোদিন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটা করে এসেছি। এটা ভালো অপশান। তবে আমাদের এর চাইতেও আরো বেশি ইফেক্টিভ পদ্ধতিতে আস্তে আস্তে শিফট করা উচিত। সেটা কেমন হতে পারে?

৩। ২০১৮ সালের সরকারি হিসাব মতে বাংলাদেশের মসজিদের সংখ্যা দুই লাখ ৫০ হাজার ৩৯৯টি। এর মধ্যে ধরেন জামে মসজিদের সংখ্যা ধরলাম একলাখ। প্রতি শুক্রবার মসজিদ প্রতি জুমুয়াতে উপস্থিত মুসল্লীর সংখ্যা ধরলাম ১০০। তাহলে মোট মুসল্লী সংখ্যা হলো ১ কোটি। ২০ কোটি জনসংখ্যা ধরলে মোট জনসংখ্যার ২০ পারসেন্ট। দেশের প্রতি ৫ জন মানুষের ১ জনকে আপনি ট্রান্সজেন্ডার মতবাদের ভয়াবহতা জানাতে পারবেন শুধুমাত্র জুমুয়ার খুতবায় খতীব সাহেবদের আলোচনার মাধ্যমে।

ট্রান্সজেন্ডারবাদীরা কোটি কোটি টাকা খরচ করছে ওদের সমাজ ধ্বংসকারী আইডিয়া প্রচারের জন্য। আর আমার আপনার বলতে গেলে কোনো টাকাই খরচ করতে হচ্ছে না। শুধু কষ্ট করে খতীব সাহেবদের কাছে তথ্যগুলো সাজিয়ে গুছিয়ে দিতে হবে। প্রয়োজনীয় তথ্য,খুতবায় কি বলা যেতে পারে তা অলরেডি সাজানোই আছে। লিংক কমেন্টে।

প্রিন্ট করে নিয়ে চলে যান। ইমাম সাহেব কি মনে করবে না মনে করবে, কিভাবে তাদের সামনে উপস্থাপন করব বক্তব্য,আমাকে তো উনারা চেনেননা- এসব ভাববেন না।আগে মাঠে নামেন, দেখবেন আল্লাহ সহজ করে দেবেন। আর আপনাদের মনের এই প্রশ্নগুলোর উত্তর ইনশা আল্লাহ সামনের পর্বে দেওয়া হবে- কিভাবে আলেম উলামাগণ,খতীব সাহেব বা সমাজের অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সামনে বিষয়টি উপস্থাপন করতে হবে।

৪। আলেম উলামাদের বিরুদ্ধে হাজারো প্রোপাগান্ডা চালিয়েছে সাংস্কৃতিক জমিদাররা। আলহামদুলিল্লাহ এর পরেও বাংলাদেশের মানুষ আলেম উলামাদের এখনো অনেক শ্রদ্ধা করেন। কথা শোনেন। সাংস্কৃতিক জমিদাররা বিরিয়ানি,সিংগারা,কোক দিয়েও মাঠে মানুষ নামাইতে পারে না, অথচ একজন আলেমের ডাকে হাজার হাজার তথা লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে যায়। জীবন পর্যন্ত দিয়ে দিতে চায়। কাজেই আলেম উলামাদের কাছে যান। উনাদেরকে এ বিষয়ে অবহিত করুন। পিডিএফটি প্রিন্ট করে দিন। উনারা এ বিষয়ে ৫-১০ মিনিট একটু আলোচনা করলেই দেখবেন মানুষ ব্যাপকভাবে সচেতন হয়ে যাবে। টেবিল আমাদের দিকে ঘুরে যাবে।

৫। ওয়াজের মৌসুম শুরু হচ্ছে। এখানেও মূল আলোচনার সংগে বক্তাগন যদি ৫-১০ মিনিট আলোচনা করেন ট্রা#$ন্সQEজেRন্ডাRর বিষয়ে তাহলেও লাখ লাখ মানুষ সমাজবিরোধীদের ধোঁকা থেকে রক্ষা পাবে। সচেতন হবে। বিকৃতমনাদের হাত থেকে এ দেশকে রক্ষা করার কাজে উঠে পড়ে লাগবে । বক্তব্যের একটি অংশে প্রশ্নোত্তর পর্ব থাকে। সেখানে ট্রান্সজেন্ডার সম্পর্কে প্রশ্ন করতে পারেন। বিশেষ করে যুগ সচেতন যেসব বক্তা আছেন তাঁদেরকে।

৬।বড় বড় মাদ্রাসাগুলোর ইফতা বিভাগে যান। উনাদের প্রকৃত অবস্থা জানিয়ে ফতোয়া জানতে চান। মাসিক আলকাউসারের মতো যতো প্রকাশনা আছে সবস্থানে প্রচারের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করুন।

৭। সুযোগ থাকলে দেশের বড় বড় কয়েকজন আলেম, দুই একজন সচেতন ডাক্তার, মোহাম্মাদ সারোয়ার হোসেইন স্যার প্রমুখ গুনীজনদের সংক্ষিপ্ত ভিডিও বক্তব্য সংগ্রহ করুন। এরপর সবগুলো একত্রিত করে ভিডিও বানিয়ে প্রচার করুন।

 

রিস্ক ফ্যাক্টর এনালাইসিস-

দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি একটু অস্থির। কিন্তু ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুর ব্যাপারে সরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম কয়েকদিন আগে বলেছে-তারা কখনই এগুলোর বৈধতা দেবেনা। লিংক কমেন্টে। তার এ সুস্পষ্ট বক্তব্য ছাড়াও বিভিন্নভাবে ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে এখনো পর্যন্ত টেবিল আমাদের দিকেই। মসজিদে,ওয়াজ মাহফিলে আলোচনা বা অনলাইনে লেখালেখির ক্ষেত্রে তাদের দিক থেকে তেমন কোনো ঝুঁকি নেই।

তবে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এখন রাস্তাঘাটে লিফলেট বিতরণ না করাই উত্তম সিদ্ধান্ত হবে বলেই মনে হচ্ছে। আল্লাহ ভালো জানেন।

জনবল বা টাকা পয়সা কেমন লাগবে-

১। প্রথমে আসি টাকা পয়সার ক্ষেত্রে। পিডিএফ আছে দুইটা। ৭ পৃষ্ঠার ছোটো পিডিএফ আর ৫০ পৃষ্ঠার বিস্তারিত ব্যাখ্যামূলক পিডিএফ। টাকা থাকলে দুইটাই প্রিন্ট করবেন। এরপর সেখান থেকে ফটোকপি করবেন। টাকা না থাকলে বড় পিডিএফটার লিংক দিবেন। আর ৭ পৃষ্ঠার পিডিএফ টা প্রিন্ট/ফটোকপি করে দেবেন। ৭ পৃষ্ঠার পিডিএফ প্রিন্ট করতে লাগবে ৭x৫= ৩৫ টাকা। এরপর ফটোকপি করবেন। ৭ পৃষ্ঠার জন্য হয় ১৪ টাকা লাগবে বড়জোর ২০ টাকা। মাত্র ২০ টাকা! কিন্ত আপনার আমার এই ২০ টাকার নোট এ দেশকে, আমাদের ভাই বোন সন্তান সন্ততিকে বাঁচিয়ে দিতে পারে ইনশা আল্লাহ।

২। জনবল- আপনার ১০/১৫ জনের একটা গ্যাং লাগবে না। আপনি একাই যথেষ্ঠ। একাই প্রিন্ট করে নিয়ে আলেম উলামাগ্ণের কাছে যান। বা বিভিন্ন মসজিদে। মাঠে নামেন। দেখবেন কাজ একেবারে পানির মতো সোজা।

পরের পর্বে- কিভাবে আলেম উলামা,খতীব সাহেব, সমাজের নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ, ডাক্তার,শিক্ষক ইত্যাদি মানুষদের কাছে ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুটি উপস্থাপন করবেন, প্রিন্ট কপি বা পিডিএফ দেবার সময় কি বলবেন ,কিভাবে বলবেন তা নিয়ে আলোচনা করা হবে ইনশা আল্লাহ।

ট্রান্সজেন্ডার নিয়ে আমরা হাসি তামাশা করছি। এটা আসলে দরকার। ট্রোল করে করে তাদেরকে একেবারে হাসির পাত্র বানানো উচিত। তবে এর সংগে মাঠ পর্যায়ে সিরিয়াসভাবে সচেতনতামূলক কার্যক্রম না চালালে অনেকেই বিভ্রান্ত হয়ে যাবে। বাংলাদেশ সরকারের সচিব পর্যায়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ যারা নীতিমালা প্রণয়নে ভূমিকা রাখেন তাদেরকেও বিভ্রান্ত করছে সমাজ বিরোধীরা। কাজেই মাঠে নামতে হবে- আপনার ভাই বোন সন্তান সন্ততির মুখের দিকে চেয়ে।