রাসূল এর সুন্নাহ হচ্ছে কোনো কাজ শরীয়তের মধ্য থেকে যে উপায়ে করলে সবচেয়ে সহজভাবে করা যাবে সেই উপায় বেছে নিতেন। অযথা কোনো কাজকে কঠিন করতেন না। আমাদের জন্য দ্বীনকে সহজ করতে বলা হয়েছে। কঠিন করতে নয়। মানুষজনকে সুসংবাদ দিতে বলা হয়েছে। এটাই আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এর কর্মপদ্ধতি। ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ দারিদ্রতার সম্মুখীন হয়েছেন, ক্যারিয়ার বিসর্জন দিয়েছেন, তাঁর সাহাবিরা খেয়ে না খেয়ে থেকেছেন, নির্যাতন জুলুমের শিকার হয়েছেন, শহীদ হয়েছেন, গৃহহারা হয়েছেন, মুসাব রাদিয়াল্লাহু আনহুর মতো সাহাবী রাজ প্রাসাদ থেকে কুঁড়েঘরে নেমে এসেছেন। আপনার কি মনে হয় তারা ইচ্ছা করে এমনটা করেছেন? মানে ইসলাম প্রচার এগুলো না করলেও হতো, এতো কাঠিন্য,কষ্ট কোনো কিছুর দরকার ছিল না, সহজেই করা যেত। কিন্তু তাঁরা ইচ্ছা করে এমন দুঃখ কষ্ট স্বীকার করেছেন, নির্যাতিত হয়েছেন! মানে তাঁরা দ্বীনকে কঠিন বানিয়েছেন?

 দেখুন পৃথিবীতে সব কাজ সহজ ভাবে হয় না। আপনি সব কাজ আরামসে করতে পারবেন এমন নয়। কোনো কোনো কাজের বৈশিষ্ট্যই এমন যে এখানে কাঠিন্য, কষ্ট, কুরবানি, চোখের জল, দেহের রক্ত দরকার। ইসলাম প্রতিষ্ঠা তেমনই একটা কাজ। ইসলাম প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন যারা দেখবে, যারা ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করতে চাই তাদের এই বাস্তবতা মেনে নিতেই হবে।ইবনুল ক্যাইয়ুম রহিমাহুল্লার সেই বিখ্যাত উক্তি তো আমরা অনেকেই শুনেছি- 

এ পথ তো সেই পথ! যেই পথে চলতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন আদম। ক্রন্দন করেছিলেন নূহ। আগুনে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন ইব্রাহিম খলীলুল্লাহ। যবেহ করার জন্য শোয়ানো হয়েছে ইসমাইলকে।খুব সল্প মূল্যে বিক্রি করা হয়েছিল ইউসুফকে,কারাগারে কাটাতে হয়েছিল জীবনের কয়েকটি বছর।যবেহ করা হয়েছে নারী-সংশ্রব থেকে মুক্ত ইয়াইইয়াকে। রোগে ভুগেছেন আইয়ুব। দাউদের ক্রন্দন, সীমা অতিক্রম করেছে। নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করেছেন ঈসা। আলাইহিমুস সালাতু ওয়াস সালাম।নানা দুঃখ-দুর্দশা, কষ্ট -ক্লেশ ভোগ করেছেন শেষ নবী মুহাম্মদ । আর তুমি এখনো খেল-তামাশায় মত্ত!

 কাজেই ক্যারিয়ার নষ্ট করো না টাইপের পরামর্শ যখন আমরা অন্যকে দেই তখন এই বাস্তবতাটাও তার সামনে পরিষ্কার করে দেওয়া উচিত। আমার ক্যারিয়ার দূরে থাক, আমার জীবন, আমার সন্তান, আমার বাবা মা, ভাই বোন এই দুনিয়ার সবকিছুর উপরে আসবেন আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল । সবকিছুর উপরে আগে আসবে ইসলাম। এ বিষয়টি মাথায় রাখার পরে দেখতে হবে আর একটি বিষয়। আমি অলসতা করে, অবহেলা করে, জজবার সঠিক ব্যবহার না করে আমার জন্য দুনিয়াকে সংকীর্ণ করে ফেলছি কিনা। কঠিন করে ফেলছি কিনা। আমি হয়ত চাইলেই ইসলামের সাথে আপোষ না করে, ইসলামের মেহনতের কোনো ক্ষতি না করে কিছু দুনিয়াও কামাই করতে পারতাম। কিছু ক্যারিয়ারও আমার থাকত। এবং আমার ইসলামের খেদমতে আমার এই ক্যারিয়ার বা অর্থ কাজে লাগাতে পারতাম। কিন্তু সেটা আমি ভুল বোঝার কারণে , অলসতার কারণে করতে পারছি না- এমন হচ্ছে কিনা? এগুলো নিয়ে সামনের পর্বে ইনশা আল্লাহ আলোচনা করা হবে।