ইনকুয়েস্ট কি তা ডগলাস হাইডের বই থেকে এবং আমার নিজের কিছু ব্যাখ্যা সহ নিচে আলোচনা করেছি-
কমিউনিস্টরা কোনো ক্যাম্পেইন শেষ হবার পরপরই যেটা করে তা হলো ইনকুয়েস্ট(Inquest) । Inquest এর বাংলা শব্দ অনুসন্ধান, তদন্ত। কোনো ঘটনা, বিশেষত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার, সম্পর্কে আলোচনা বা তদন্ত। ইনকুয়েস্টে একে অপরের উপর পুলিশগিরি করার ব্যাপারে তাদের মনোযোগ থাকেনা। বরং তাদের পুরো মনোযোগ নিবন্ধ থাকে ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে পার্টির কি কি দুর্বলতা প্রকাশ পেল, তারা কি কি ভুল করল ইত্যাদি খুঁজে বের করার দিকে। আমরা কতো ভালো ক্যাম্পেইন করলাম, সবাই মিলে কি চমৎকার কাজ করলাম-একে অপরের সাথে এসব আলোচনা না করে তারা ভুল খুঁজে বের করার চেষ্টা করে ।
ধরুন আপনি নিজে একজন কমিউনিস্ট। আপনারা কোনো ক্যাম্পেইন করে এসেছেন। এখন ইনকুয়েস্ট শুরু হয়েছে। প্রথমে আপনি আত্মসমালোচনা করবেন। স্বীকার করবেন আমি এভাবে এভাবে ভুল করেছি। আপনি কোন কোন ব্যাপারে সফল হয়েছেন তা একবারের জন্যেও বলবেন না। আপনি যে কিছু ব্যাপারে সফল হয়েছেন এটা সবাই জানে। নতুন করে বলার আর কিছু নেই। এরপর বলবেন আপনি কোন কোন বিষয়ে ভুল করেছেন। এভাবে সততার সাথে অকপটভাবে নিজের দোষ স্বীকার করার পর আপনি উপস্থিত অন্য কমরেডদের সমালচনা করার অধিকার অর্জন করবেন । এরপর আপনি অন্য কমরেডদের ভুল সামনে নিয়ে আসবেন। অন্যরা এ ব্যাপারে কি ভাবছে তা জানতে চাইবেন। কোনো ভুল লুকিয়ে রাখা হবে না। সব সামনে নিয়ে আসা হবে। এভাবে সব ভুলের ব্যাপারে বারবার আলোচনার ফলে বোঝা যাবে কেন ভুলগুলো হচ্ছে , কিভাবে ভুলগুলো এড়ানো যেত এবং এখান থেকে আমরা কি কি শিখলাম যা এধরনের অন্য কাজগুলোর ক্ষেত্রে আমরা প্রয়োগ করতে পারি।
খুব চাছালো ভাষায় ইনকুয়েস্ট করা হয়। অন্যরা সাধারণত এমন ভাষা ব্যবহার করে না। কিন্তু কমিউনিস্টরা তাদের কাজকে যেভাবে সিরিয়াসলি দেখে কোনো সংগঠণ তাদের কাজের ব্যাপারে এমন সিরিয়াস হতে চাইলে আত্মসমালোচনার এ পদ্ধতি তাদের খুবই কাজে লাগবে। যেসব সংগঠন নিজেদের অভিজাত বা এলিট মনে করে, বা অভিজাত হতে চায় এবং যতো বেশী সম্ভব নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধি করে কার্যকরভাবে কাজ করতে চায় তাদের জন্য বলশেভিক ইনকুয়েস্ট খুবই উপকারী হবে।
ইনকুয়েস্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর ধাপগুলো আরও একবার দেখা যাক।
- নিজের সমালোচনা করা
- সফলতার কথা না বলা
- সৎ এবং স্পষ্টভাবে ভুল স্বীকার করা : আপনার ভুলগুলো স্পষ্টভাবে বলুন, যেমন “আমি এই, সেই, এবং অন্য জায়গায় ভুল করেছি।”
- নিজে ভুল স্বীকারের পর অন্যদের সমালোচনা করা
- অন্যদের মতামত চাওয়া এ বিষয়ে অন্যদের মতামত জিজ্ঞাসা করুন।
- কোনো ভুল গোপণ না করা। সব ভুল সামনে নিয়ে আসা আনুন
- কেন ভুল হলো তা বোঝা : গভীরভাবে বিশ্লেষণ করুন কেন ভুলগুলো হয়েছে।
- ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা এবং পরের ক্যাম্পেইনগুলোতে ভুল থেকে যে শিক্ষা পাওয়া গেল তা বাস্তবায়ন করা
একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। মনে করুন ভ্যালেন্টাইনে জেনা ব্যভিচারের উৎসব বসে। একদল এক্টিভিস্ট সিদ্ধান্ত নিলেন ভ্যালেন্টাইনের এই অশ্লীলতা জেনা ব্যভিচারের বিরুদ্ধে তারা রম্য মিছিল করবেন। এর মাধ্যমে মানুষজনকে সচেতন করবেন। বাংলাদেশে আগে কখনো এমন মিছিল হয়নি। তো তারা, রম্য মিছিল করল। মিছিলের ভিডিও করে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করার পর সেখানে অনেক মানুষের পজিটিভ কমেন্ট পড়ল। ভিডিও অনেক ভিউ হলো। মিছিল করার পর এক্টিভিস্ট দল ইনকুয়েস্ট করতে বসল। তো তারা কখনো বলবে না আমরা কতো বড় সফলতা পেয়েছি। বাংলাদেশে আগে কখনো কেউ এমন কিছু করেনি। মানুষ আমাদের অনেক সমর্থন করেছে। অনেক প্রশংসা করেছে। ভিডিওর ভিউ অনেক হয়েছে। আমরা একটা ট্রেন্ড সেট করলাম। পরের বছর সারা দেশে আমাদের মিছিলের মতো মিছিল করবে মানুষজন। তাদের ইনকুয়েস্ট হবে এমন-
একজন বলবে মিছিলের সময় মানুষজন আমাদের দিকে অনেক আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে ছিল। আমরা তাদের হাতে জেনা ব্যভিচার অশ্লীলতা বিরোধি লিফলেট ধরিয়ে দিতে পারতাম। তাহলে আমাদের মেসেজ আরও অনেক মানুষের কাছে পৌছাতো।
আর একজন বলবে- আমাদের স্লোগান মানুষেরা ভালোমতো বুঝতে পারেনি। আমাদের উচিত ছিল খালি গলায় স্লোগান না দিয়ে মাইকে স্লোগান দেওয়া।
আর একজন বলবে- আমরা মিছিলের লাইভ করিনি। লাইভে গেলে আরও অনেক মানুষের কাছে আমাদের মেসেজ পৌছাতো।
আর একজন বলবে- আমরা দুপুর বেলা মিছিল করেছিলাম । সে সময় তো রাস্তাতে মানুষ থাকেনা বেশী। আমাদের ছিল বিকালে মিছিল করা।
আর একজন বলবে- আমাদের মূল টার্গেট ছিল স্টুডেন্টরা। অথচ আমরা মিছিল করেছি এমন রাস্তায় যেখানে স্টুডেন্টের সংখ্যা খুবই কম ছিল।
তো এভাবে তারা একের পর এক ভুল বের করবে। নির্দয়ভাবে নিজেদের সমালোচনা করবে। এবং সবশেষে কিভাবে মিছিল করতে হয়- এনিয়ে একটা ম্যানুয়াল বা গাইড লাইন তৈরি করবে। এই গাইডলাইন দেখলেই পরবর্তী মিছিলগুলোতে এই সেইম ভুল করার সম্ভাবনা আর থাকবে না।