ক্রিকেটার সাকিব তামিম দ্বন্দ চলছে। ক্রিকেটের খোঁজ খবর রাখতে না চাইলেও আপনারা প্রায় সবাই হয়ত এই দ্বন্দের কথা জেনেছেন। এতোটাই আলোচিত ঘটনা এটা গতো কয়েকদিনের। ক্রিকেটার তামিম ইকবাল তার সর্বশেষ ভিডিওতে এসে সর্বশেষ যে কথাটা বললেন তা হলো- আপনারা আমাকে ভুলে যাইয়েন না, মনে রাইখেন …এই রিকোয়েস্ট করি।
তামিম শেষ অনুরোধ হিসেবে কেন এমন কথা বললেন? কারণ এইযে খেলোয়াড়,গায়ক,অভিনেতা,সাহিত্যিক …সবাই মানুষের কাছ থেকে স্বীকৃতি চায়। মানুষের কাছ থেকে প্রশংসা শুনতে চায়। এবং তাদের কাজের বিনিময়ে খ্যাতি, অর্থ চায়। এটা শুধু সেলিব্রেটিদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য বিষয়টি এমন নয়। মোটাদাগে আমি আপনি সবাই মানুষের কাছ থেকে স্বীকৃতি, প্রশংসা, অর্থ,খ্যাতি এসবের জন্য কাজ করি।
যদি বিসিএসে এতো সামাজিক মর্যাদা, খ্যাতি,সম্মান না থাকত, বিসিএসের এতো ক্রেজ থাকত? যদি পোশাক খোলাকে নারীদের সামনে জনপ্রিয়তা,খ্যাতি,প্রশংসা পাবার উপায় হিসেবে উপস্থাপন না করা হতো তাহলে এতো নারী কি এভাবে পোশাক খুলত?
দুনিয়াবি কাজের ক্ষেত্রে খ্যাতি স্বীকৃতির এ ব্যাপারগুলো ইসলামের খেদমত করতে গিয়েও চলে আসলে ব্যাপক সমস্যা তৈরি হয়। মানুষের প্রশংসা,খ্যাতি,স্বীকৃতি, মানুষের কাছ থেকে সম্মান লাভ করা এসব যেন আপনার ইসলামের কাজ করার পেছনের চালিকা শক্তি না হয়। চালিকা শক্তি যেন হয় একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি। যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্য আপনার মনে থাকে তাহলে আপনি দুনিয়া শুদ্ধ দান করে দিলেও সে দানের কোনো মূল্য থাকবে না।
আপনি দান করলেন মানুষের কাছ থেকে স্বীকৃতির জন্য আপনার সকল দান আখিরাতে আপনার মুখের উপর ছুড়ে মারা হবে।
আপনি বই লেখলেন লেখক হিসেবে খ্যাতি পাবার জন্য, লাখ লাখ ফলোয়ারস, সম্মান পাবার জন্য আপনার বই লাখ লাখ কপি বিক্রি হলেও আখিরাতে আপনার কোনো কাজে আসবে না।
মানুষের কাছ থেকে স্বীকৃতি লাভের জন্য,সম্মান লাভের জন্য আপনি তাদের গোলাম হয়ে যাবেন। আপনি হক কথা বলার চাইতে এমন কথা বলবেন যা আপনার পাঠকেরা শুনতে চায়, যা বললে কেউ নারাজ হবে না। আপনার ফ্যান ফলোয়ারস কমে যাবে না। সবসময় আপনি ফলোয়ার হারানোর ভয়ে তটস্থ থাকবেন। আপনি মানুষের ক্রীতদাসে পরিণত হবেন।
আপনি অন্য লেখক, আলেম, কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের হিংসা করবেন। আরে ওদের এতো ফলোয়ারস, আমার হয় না কেন, আরে ওদের মানুষ এতো সম্মান করে আমাকে করে না কেন…। হিংসায় আপনার মনের শান্তি পুড়ে যাবে। আপনি মুসলিম ভাইয়ের অমংগল কামনা করবেন। হয়ত শত্রুতাও করবেন।
মানুষের কাছ থেকে স্বীকৃতি,লাইক,শেয়ার,কমেন্ট না পেলে আপনি দ্বীনি কাজ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন।অল্পতেই হতাশ হয়ে পড়বেন… আরে এতো কষ্ট করে ভিডিও বানালাম ভিউ এতো কম, আরে এতো কষ্ট করে বই লেখলাম বিক্রি অনেক কম, … বাদ দেই দরকার নাই এসব করার।
অথচ আপনি যদি মানুষের কাছ থেকে স্বীকৃতি,খ্যাতি,সম্মান,প্রশংসা বা স্রেফ অর্থের জন্য কাজ না করে আল্লাহর জন্য কাজ করতেন তাহলে…
আল্লাহ এই কাজগুলোর বিনিময়ে আপনাকে মাফ করে দিতেন। কোটি কোটি টাকা না, বার বার হজ্জ করা না, পাঠকপ্রিয় বই এর লেখক হওয়া না অন্তর থেকে কেবল মাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যদি একটা খেজুর দান করেন, পাঁচ টাকা দশটাকা দান করেন, রাস্তাঘাটে অশ্লীলতা বিরোধী পাঁচটা লিফলেট বিতরণ করেন, মানুষকে ইসলামের দিকে আহ্বান করে ফেইসবুকে সামান্য একটা পোস্ট দেন,বা দু রাকাত সালাত আদায় করেন বা রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানোর মতো কাজও করেন আল্লাহর কাছে এগুলো অত্যন্ত প্রিয় হবে ইনশা আল্লাহ। হাদীসে আমরা এমনটাই দেখেছি। কেবল আল্লাহর জন্য তৃষ্ণার্ত কুকুরকে বা পিঁপড়াকে পানি পান করানোর জন্য আল্লাহ কঠিন পাপে লিপ্ত ব্যক্তিকেও ক্ষমা করে দিয়েছেন।
আপনি মানসিক অশান্তিতে ভুগতেন না, মানুষের গোলামে পরিণত হতেন না,হক্ক কথা বলতে পারতেন- এ কথা বললে বা লেখলে আমার ফ্যান ফলোয়ার কমে যাবে যাক। কিন্তু একথা এখন বলা জরুরি। সত্য গোপন রাখা যাবে না। তাই আমি সর্বোত্তম উপায়ে হক্ক কথা বলব… এমন হতো আপনার চিন্তা।
মুসলিম ভাইয়ের প্রতি আপনার হিংসা বিদ্বেষ থাকত না। আপনার অন্তর অশান্ত,অস্থির থাকত না। অমুক লেখকের বই পাঠকপ্রিয়তা লাভ করছে, অমুক আলেমের অনেক ভক্ত, অমুক ভাইয়ের কথা তরুণ প্রজন্ম অনেক গুরুত্ব দেয়… আলহামদুলিল্লাহ। ইসলামের খেদমতে আল্লাহ অনেক মানুষকে কবুল করছেন। আল্লাহর দ্বীনের প্রচার হচ্ছে। আল্লাহ আমাকেও যেন তাদের মতো কবুল করে নেন…এমন হতো আপনার চিন্তা।
আপনি মানুষের উপকার করলেন, মানুষকে টাকা ধার দিলেন। বিনিময়ে সে মানুষ আপনার বিপদে আপদে পাশে দাড়াল কিনা, আপনাকে সম্মান করে কথা বলল কিনা আপনি এসব ভাবতেন না। কারণ আপনি তাকে সাহায্য করেছেন শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।
আপনি কখনোই হতাশ হতেন না, কখনোই ভেঙে পড়তেন না। আপনি হয়ত অনেক পরিশ্রম করে দাওয়াতি কাজ করছেন, লেখালেখি করছেন, ভিডিও বানাচ্ছেন…কিন্তু খুব কম মানুষ আপনার কথা শুনছে, আপনার ভিডিওর ভিউ খুব কম। কিন্তু এরপরেও আপনি হতাশ হতেন না। রেগুলার কাজ চালিয়ে যেতেন। কারণ মানুষ আপনার কষ্টের মূল্য দিক না দিক তাতে আপনার কিছু যায় আসে না। আপনি কাজ করছেন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। একজন মানুষও যদি আপনার দাওয়াত কবুল না করে, আপনার পোস্টে লাইক কমেন্ট না করে , কিন্তু আল্লাহ যদি আপনার কাজ কবুল করেন এতেই আপনি খুশি। এটাতেই আপনার সফলতা। আপনার খ্যাতি আসলো কিনা, আপনার ফ্যান ফলোয়ারস হলো কিনা,মানুষজন আপনাকে সম্মান করল কিনা… এটা নিয়ে আপনার কোন টেনশন থাকবে না। অনেক নবী সারাজীবন দাওয়াত দিয়েছেন। কিন্তু তাদের কোনো অনুসারী ছিল না। তাঁরা কি ব্যর্থ ছিলেন? না। কাজেই আপনিও ব্যর্থ না যদি সুন্নাহসম্মতভাবে ইসলামের খেদমত করে যান।
কোনো কাজকেই আপনি গুরুত্বহীন মনে করতেন না, ছোটো মনে করতেন না। আরে লিফলেট বিলি করা কোনো কাজ হলো, আরে পেইজের ইনবক্সের রিপ্লাই দেওয়া, গ্রুপ চালানো এগুলো কোনো কাজ হলো। এর চাইতে বই লেখলে বা দুইটা ফেইসবুকে পোস্ট করলে অনেক লাইক শেয়ার ফ্যান ফলোয়ারস পাওয়া যেত। এমন চিন্তা করতেন না।
আমার কি করতে ভালো লাগছে, আমি কি করলে খ্যাতি পাব এটার পরিবর্তে আমি কোন কাজটা করলে ইসলামের জন্য ভালো হবে এটা চিন্তা করতেন।
আপনি হতেন নিখাদ, নির্ভেজাল, খাটি এক মানুষ।