একবার এক ফেইসবুক পোস্টে দেখেছিলাম একজন প্রশ্ন করেছে – বাংলাদেশের তরুণদের যেনা-ব্যভিচার থেকে বাঁচানোর জন্য বিয়ে দেওয়া দরকার। কিন্তু বিয়ে তো অনেক কঠিন। তাহলে করণীয় কী? অনেকে অনেক কমেন্ট সে পোস্টে। বেশ কিছু কমেন্ট পেলাম এমন – শরীয়া আইন কায়েম করতে হবে। খিলাফাহ প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

এই বিষয়ে মন্তব্য করার আগে অন্য একটা ঘটনা বলি। ধরুন, বিজ্ঞান পরীক্ষায় প্রশ্ন এসেছে, আকাশ কেন নীল দেখায়? আপনি উত্তরে লিখলেন – আল্লাহ আকাশকে নীল বানিয়েছে তাই আকাশ নীল দেখায়। আপনার উত্তর ঠিক আছে। কিন্তু আপনি শূন্য পাবেন। উপরের বিয়ে সংক্রান্ত পোস্টের কমেন্টগুলোও এমন। শরীয়া আইন কায়েম করতে হবে, খিলাফাহ প্রতিষ্ঠিত করতে হবে – ঠিক আছে। কিন্তু আপনি তা কিভাবে করবেন?

কোনো তত্ত্ব কথা না। বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতি, মানুষ সবকিছু মাথায় নিয়ে বাস্তবিক পরিকল্পনা দিন এভাবে এভাবে আমরা শরীয়া আইন কায়েম করব। এই ফরমুলা অনুসরণ করে বাংলাদেশের মতোই একই বৈশিষ্ট্যের অধিকারী কোনো দেশ সফল হয়েছে। এরকম উত্তর আর পাওয়া যায় না। আবার অনেকে কিছু উত্তর দিবেন যা বাস্তবায়ন করা সম্ভব না তা উনারা নিজেও জানেন। যেহেতু বাস্তবায়ন করা এখন সম্ভব না তাই এখন কিছুই করার নাই। হাত গুটিয়ে থাকি। অমুক ভাইয়ের সাথে অমুক ভাইয়ের গ্যাঞ্জাম লাগছে। যাই একটু কমেন্ট করে আসি। শরীয়া বাস্তবায়ন করা ছাড়া সমস্যার একেবারে সমাধান হবে না। এটা সত্য। কিন্তু সমস্যা লঘু করার জন্য কোনো উদ্যোগ নেওয়া যায় না হাত গুটিয়ে বসে না থেকে? অভিভাবকদের বোঝানো, বিয়ে নিয়ে ফ্যান্টাসিতে ভোগা মানুষদের ভুল ভাংগানো, ৩০+ বছর বয়সী বালকদের পুরুষ হতে,দায়িত্ব নিতে শেখানো? এরকম আরও অনেক কিছু?

এখন খিলাফা নাই তাই আমরা শুধু বাচ্চাছেলের মতো নাই নাই করে কান্না করব নাকি যা আছে তাই নিয়ে পরিস্থিতির সরবোচ্চ ব্যবহার করার চেষ্টা করব? ইসলাম আমাদের কী শেখায়?

মুসা আলাইহিস সালাম তাঁর কওমকে নিয়ে ছুটছেন। পেছনে ধেয়ে আসছে ফেরাউনের বিশাল বাহিনী। সামনে সাগর পড়ল। পালাবার পথ নেই। আল্লাহ মুস আলাইহিস সালামকে বললেন তোমার হাতের লাঠি দ্বারা আঘাত করো সাগরে। তিনি আঘাত করলেন। সঙ্গে সঙ্গে সাগরে ১২ টা রাস্তা হয়ে গেল। মরিয়ম আলাইহিস সালাম নির্জনভূমিতে প্রসব বেদনায় কাতরাচ্ছেন। আশেপাশে কেউই নেই। উনি শুয়ে আছেন খেজুর গাছের নিচে। খাবার দরকার। শরীরে শক্তি দরকার। কিন্তু উঠে দাঁড়িয়ে খেজুর গাছ থেকে খেজুর পাড়ার শক্তি উনার অবশিষ্ট নেই। আল্লাহ বললেন, তুমি পা দিয়ে খেজুর গাছে ধাক্কা দাও। মরিয়ম আলাইহিস সালাম খেজুর গাছে ধাক্কা দিলেন পা দিয়ে। খেজুর পড়ল।

এখন এই ২ টি ঘটনা নিয়ে একটু ভাবা যাক। লাঠির আঘাতে কখনো সাগরে মধ্যে রাস্তা তৈরি হয়? খেজুর গাছের কান্ড মারাত্মক শক্ত হয়। আম গাছ বা বরই গাছে ঝাকি দিয়ে ফল পাড়ার মতো খেজুর গাছে ধাক্কা মেরে, ঝাকি মেরে ফল পাড়া যায় না এটা যারা খেজুর গাছ দেখেছেন তারাই জানেন। তাহলে আল্লাহ কেন মূসা আলাইহিস সালামকে বললেন লাঠি দিয়ে সাগরে আঘাত করো? কেনই বা মরিয়ম আলাইহিস সালামকে পা দিয়ে খেজুর গাছে ধাক্কা দিতে বললেন? এই দুই ঘটনা থেকেও আলেমগণ আমাদের জানিয়েছেন- আল্লাহ এই দুই ঘটনা থেকে মানুষকে দুনিয়ার নিয়ম শেখাচ্ছেন – বান্দা আল্লাহর উপর ভরসা করে তাঁর পক্ষে যতোটুকু করা সম্ভব করবে ( মূসা আলাইহিস সালামের লাঠি দিয়ে সাগরে আঘাত করা, মরিয়ম আলাইহিস সালামের পা দিয়ে খেজুর গাছে ধাক্কা দেওয়া), এরপর আল্লাহ তায়ালা বাকিটা করবেন।

আমাদের কাজটুকু আমাদের করতে হবে। আমরা কি সেই কাজটুকু করছি?