সে অনেককাল আগের কথা।

একদেশে ছিল এক গভীর বন। সেই বনের বানরদের রাজা ছিল ইয়া বড় এক বানর। সাধারণ বানর প্রজাদের উপর ব্যাপক অত্যাচার করতো সে। শোষণ করত। বানর রাজা নিয়ম করে দেয়- প্রত্যেক বানর সূর্য উঠার আগেই বের হয়ে পড়বে। বন বাদাড়ে ফলমূল খুঁজতে হব সূর্য ডোবার আগ পর্যন্ত। সারাদিনের সংগৃহীত ফলের ৮০ ভাগ জমা দিতে হবে বানর রাজার কাছে- বনে থাকার খাজনা হিসেবে। বাকী ২০ ভাগ তারা নিজেদের খাবার জন্য রাখতে পারবে। কঠোরভাবে এই নিয়ম মানতে হতো বনের প্রত্যেক বানরকে। কাজে ফাকিবাজি করলে বা ফল জমা দিতে না চাইলে জুটতো কঠোর অত্যাচার। খাজনা দেবার পরে রয়ে যাওয়া ফলগুলো ছোটো ছোটো বাচ্চা কাচ্চার ক্ষুধা মেটানোর জন্যেই যথেষ্ট ছিল না। বড় বানরেরা বলতে গেলে কিছুই খেতে পেতো না। অমানুষিক পরিশ্রম, ক্ষুধা,অত্যাচারে শেষ হয়ে যেত শরীর। ওদিকে সারাদিন ভোগ বিলাস শুয়ে বসে থেকে ফুর্তি করে বানর রাজা দিনে দিনে আরও বড় হয়ে উঠল। এভাবেই চলছিল বছরের পর বছর ধরে। মুক্তির কি উপায়? কি উপায়? অনেক চিন্তা ভাবনা চললো। অনেকে  অনেক কথা বলল- চল আমরা সবাই মিলে বানর রাজাকে আক্রমণ করি।

– উহু সম্ভবই না। ওর শক্তির সাথে পেরে উঠবে না

– বৃদ্ধ এক বানর তৎক্ষণাৎ এই আইডিয়া বাতিল করে দিল।

একজন বলল- চল, পাশের বনের রাজা সিংহের কাছে নালিশ দেই।
-আরে না সে বানর রাজাকে সরিয়ে আমাদের খাওয়া শুরু করে দেবে।
এমন অনেক আলোচনা চলল। কিন্তু মুক্তির কোনো উপায় মিললো না। এভাবেই দুঃখ দুর্দশায় কাটতে লাগল দিন। একদিন এক তরুণ বানর আকাশ বাতাস কাপিয়ে চিৎকার করে উঠল- আইডিয়া!

সবাই ছুটে আসলো ওর কাছে।

– কি ব্যাপার?

বানর রাজার রক্ষীদের কান এড়িয়ে ফিসফিস করে জড়ো হওয়া কানগুলোতে আইডিয়া বাতলালো সে। দেখ, আমরা আসলে সবাই মিলে চাচ্ছি না যে এমন খাজনা দেওয়া বন্ধ করব। তাই হচ্ছে না। আমরা একে অন্যকে বিশ্বাস করি না। ভাবি আমি খাজনা দেব না ঠিকই, কিন্তু অন্যরা দেবে। আমি শুধু বানর রাজার চোখে খারাপ হয়ে যাব। দেখ সবাই মিলে চাইলে বানর রাজা কিছুই করতে পারবে না। আজ থেকে আমরা কেউই আমাদের কষ্ট করে সংগ্রহ করা ফল জমা দেব না। সবাই মিলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলো। ১ টা ফলও জমা পড়ল না সেদিন। বানর রাজা বহুত হম্বিতম্বি করল। কিন্তু কিছুই করতে পারল না এই ‘বানরস্ত্রোতের’ কাছে। লজ্জায়,অপমানে বন ছেড়ে পালালো সে।

দুই.

আমাদের এই ভূমি মুসলিমদের রক্ত দিয়ে, অশ্রু দিয়ে কেনা। হাজী শরীউত উল্লাহ, তিতুমীর, দুদুমিয়া থেকে শুরু করে ৪৭ পেরিয়ে ৭১ সবখানেই মাটির জন্য মানুষের জন্য কুরবানি করেছি আমরা। সেই ভূমিতেই আজকে আমরা অনেকটাই আগুন্তকদের মতো। স্কুলের পাঠ্যপুস্তকের ভাষায় ভিনদেশী দখলদার। আস্তে আস্তে আমাদের পায়ের মাটি সরে যাচ্ছে। পর্দা করা মা বোনদের ভূতের সাথে তুলনা করা হচ্ছে পাঠ্যপুস্তকে, ক্লাস থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে, ভাইভাতে অপমান করা হচ্ছে। দাড়ি রাখার অপরাধে আমাদের ভাইদের চাকরি হচ্ছে না। পাঠ্যপুস্তকে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, মানসিক বিকৃতির পাঠ দেওয়া হচ্ছে আমাদের কোমলমতি সন্তানদের। জেনা ব্যভিচার, অশ্লীলতা, সমকামিতাকে প্রগতিশীলতা, আধুনিকতার নামে স্বাভাবিক করা হচ্ছে। কোণঠাসা করা হচ্ছে মুসলিমদেরকে। কাঠামোগতভাবে ভুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে আত্মপরিচয়। এসবের বিপরীতে আমরা দুধরণের কাজ করতে পারি।

১। আমাদের শক্তি সামর্থ্য নেই, আমরা এই আগ্রাসনের মোকাবেলা করতে পারব না ভেবে নিষ্ক্রিয় বসে থাকতে পারি। ফেইসবুকে হা হুতাশ করতে পারি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বিষিয়ে যাওয়া এক বাংলাদেশ রেখে যেতে পারি।

২। সীমিত সামর্থ্য যা আছে তা নিয়েই কাজ করে যেতে পারি। সবাইকে হয়তো আগ্রাসনের হাত থেকে রক্ষা করা যাবে না। তবে সবাই হানাহানি বিভেদ মতপার্থক্য কিছু সময়ের জন্য ভুলে গিয়ে একতাবদ্ধ হলে ১০০ জনের মধ্যে ১০০ জনকে না পারি অন্তত ১০ জনকে এই আগ্রাসন থেকে রক্ষা করতে পারব ইনশা আল্লাহ। যদি আমরা ১ নম্বর পয়েন্টের মতো নিষ্ক্রিত বসে থাকতে না চাই। এবং যদি আমরা ২ নম্বর পয়েন্ট মেনে নেই। তাহলে প্রশ্ন আসে যে একতাবদ্ধ হয়ে সীমিত সামর্থ্য নিয়ে কি কাজ করা হবে? কিছু কাজের লিস্ট এখানে দেওয়া হচ্ছে। এই কাজগুলো কার্যকরী ইনশা আল্লাহ। বিশ্বের অনেকদেশেই এসব কর্মসূচী অনুসরণের মাধ্যমে ফলাফল এসেছে।

 

  • জুম্মার খুতবাহতে ধারাবাহিকভাবে আগ্রাসনের বিরুদ্ধে গঠণমূলক আলোচনা।
  • স্কুল কলেজ মাদ্রাসা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সমাজের সকলস্তরের মানুষদের মধ্যে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন বিরোধী লিফলেট বিতরণ,সেমিনায় আয়োজন ইত্যাদি কর্মকান্ড পরিচালনা করা।
  • সমাজের সকলস্তরের মানুষকে নিয়ে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধণ আয়োজন করা।
  • তরুণ প্রজন্মকে মোবাইল আসক্তি থেকে দূরে সরিয়ে মাঠে ময়দানে খেলাধুলার ব্যবস্থা করে দেওয়া।
  • শীত বস্ত্র বিতরণ,বৃক্ষরোপন, বয়স্ক/পথশিশুদের শিক্ষা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচী, পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে সচেতনতামূলক কর্মকান্ড সহ সমাজকল্যাণমূলক কাজে এলাকার কিশোর তরুণ যুবকদের নিয়োজিত করা।
  • এলাকায় এলাকায় পাঠাগার গড়ে তোলা। পাঠচক্র আয়োজন করা।