বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ইসলামপন্থীরা সমাজে অত্যন্ত কোণঠাসা। আমাদের সংখ্যা যত বেশিই হোক না কেন। সেই সঙ্গে আমাদের নিজেদের মধ্যে ভয়ঙ্কর রকমের দলান্ধতা রয়েছে। আমরা উম্মাহ কেন্দ্রিক চিন্তাভাবনা এখনো করতে পারছি না সবাই। এমন পরিস্থিতিতে আমরা আসলে অনেক কিছু চাইলেও করতে পারি না। খাতা-কলমে অনেক কিছুই করে ফেলা যায়। কিন্তু বাস্তবতা আসলে কঠিন। সামাজিক শক্তি অর্জনের জন্য দেশব্যাপী ক্যাম্পেইনের ব্যাপারে আমরা কয়েকদিন ধরেই আলোচনা করছি। এখানে ভাইয়েরা অনেক সুন্দর সুন্দর পরামর্শ দিয়েছেন। অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জন করা, দলমত নির্বিশেষে সবাই একতাবদ্ধ হওয়া, সেন্ট্রাল কমান্ড ইত্যাদি। এগুলো যেকোনো সামাজিক আন্দোলন পরিচালনা করার জন্য জরুরি। তবে ভাই, আমাদের বর্তমান পরিস্থিতিতে এসব কিছু করার সক্ষমতা আছে কিনা?

১। আমরা কি দলমত নির্বিশেষে একতাবদ্ধ হতে পারব সবাই?
২। একটা সেন্ট্রাল কমান্ডের অধীনে সবাই থাকার জন্য প্রস্তুত?
৩। সেই সেন্ট্রাল কমান্ডে কারা কারা থাকবেন? আলেম উলামাগণ থাকবেন- এমন জেনারালাইজড উত্তর না। স্পেসিফিক উত্তর- অমুক আলেম থাকবেন, অমুক আলেম রাজি হয়েছেন- এমন উত্তর আমাদের কাছে আছে?
৪। কেন্দ্রীয়ভাবে অর্থনৈতিক সক্ষমতা, অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা বজায় রাখা ইত্যাদির জনবল কি আমাদের আছে?

অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে যে এসব ব্যাপারে আমরা পিছিয়ে আছি। এগুলো সবই দরকার। কিন্তু আমাদের হাতে নেই। এবং আমাদের ভুখন্ডের অধিবাসীদের একটি মানসিকতা হলো আমরা যে কাজের জন্য ১/২ জন লোক দরকার তার জন্য অনেক আয়োজন করি।

১০/১২ সদস্যের কমিটি করি। বহুত পরিকল্পনা করি। কিন্তু দিনশেষে কিছুই করি না। এই সম্ভাবনা আছে যে আমরা শুধু এই ৪ টা উপাদান অর্জনের চেষ্টা করেই যাচ্ছি করেই যাচ্ছি কিন্তু ময়দানে আর নামা হচ্ছে না। আপনি এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে পড়বেন। এজন্য আপনি ক্লাস ফাইভের বাচ্চাকে ক্লাস নাইন টেনের পদার্থ বিজ্ঞানের বই ধরিয়ে দেবেন না। তাকে ক্লাস ফাইভের বইয়ের বিজ্ঞান পড়াবেন। এরপর ধাপে ধাপে সে বাকী ক্লাসগুলো পার হয়ে এসে নাইন টেনে পদার্থ বিজ্ঞান পড়বে। ক্লাস ফাইভের বাচ্চার বইয়ের বাচ্চার জন্য ক্লাস ফাইভের বিজ্ঞান বই দরকার। পদার্থ বিজ্ঞান বই আরও পরে দরকার। আমরা সামাজিকভাবে শক্তিশালী হবার স্কুলে ক্লাস ফাইভেও পড়ি না। কিন্ডারগার্ডেনে পড়ি। এখন আমাদের ১,২, ক,খ পড়তে লেখতে শেখার সময়। পদার্থ বিজ্ঞান শেখা আরও পরে আসবে। এখন পদার্থ বিজ্ঞান পড়তে পারব না, তাই বলে কি ১,২ বা ক ,খ শেখা বন্ধ করে দেব? এগুলো না শিখলে ৮/১০ বছর পর পদার্থ বিজ্ঞান শেখার ক্লাসে উঠব কিভাবে ভাই? আমি আবারও বলছি আমাকে ভুল বুঝবেন না। আমি আপনাদের মতামতকে উড়িয়ে দিচ্ছি না। আপারা প্রত্যেকে যা যা বলেছেন তা সবই দরকার। সবই করতে হবে। না হলে দীর্ঘমেয়াদে সামাজিক শক্তি অর্জন করা যাবে না। কিন্তু সেগুলো কাজ শুরু করার আগেই করতে হবে এমন না। আগে তো আমাদের মাঠে নামতে হবে। স্কুলে ভর্তি হতে হবে। তারপর না উপরের ক্লাসের পদার্থ বিজ্ঞান শেখা।

মাঠে নামার জন্য ভালো উপায় হলো স্থানীয়ভাবে এলাকাভিত্তিক কিছু ছোটো ছোটো স্বতন্ত্র দল তৈরি করা। যারা সামাজিক (রাজনৈতিক নয়) বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে লিফলেট বিতরণ, সেমিনার স্ট্রিট দাওয়ার মতো কিছু ছোটো ছোটো কাজ করবে। যেখানে খুব বেশী টাকা, দক্ষতা বা জনবলের দরকার পড়বে না। (এগুলো অলরেডি হচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ) ধীরে ধীরে এগুলো বহমান থাকলে ইনশা আল্লাহ পরের ধাপগুলোতে প্রবেশ করা যাবে। উপরের আলোচিত উপাদানগুলো ইনশা আল্লাহ আমরা অর্জন করতে পারব। দুইটি কাজ পাশাপাশি চলবে। ময়দানের কাজ এবং এই মডেল নিয়ে আমার বিগত পোস্টে আপনারা অনেকেই কিছু প্রশ্ন তুলেছিলেন।

সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর ইনশা আল্লাহ পরের পরের পর্বে দেয়া হবে। সেই সাথে ধারাবাহিকভাবে আমাদের ক্ষুদ্রজ্ঞানে আলোচনা করার চেষ্টা থাকবে ময়দানের কাজের পদ্ধতি ও কৌশল।

সমাজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এই আক্ষেপে শুধু সামাজিক মাধ্যম গরম না করে ময়দানে নামা দরকার, আমাদের এখনো ময়দানে নামার সুযোগ আছে । আমাদের সীমিত সামর্থ্য যতোটুকু আছে তা নিয়েই এখন ময়দানে নামা দরকার। এগুলো এখনই করা সম্ভব। আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করলে, ইনশা আল্লাহ। চলুন সামাজিক শক্তি অর্জনের স্কুলের কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি হই।