দ্বীনের জন্য স্যাক্রিফাইস করা, ক্যারিয়ার নষ্ট করা অনেক ক্ষেত্রেই আসলে আপেক্ষিক একটা ব্যাপার। বুঝিয়ে বলি।

ধরেন এক ভাই নাম জাবের। চাকরি করতেন মাসিক ১ লাখ টাকার। ছোটো থেকেই মোটামুটি স্বচ্ছল পরিবারে বেড়ে উঠেছেন। টাকা পয়সার অভাব তেমন বোঝেননি। এখন উনি দ্বীনের জন্য ক্য্যারিয়ার স্যাক্রিফাইস করে এখন এমন কোনো চাকরি বা কাজ করেন যেখানে তার মাসিক ইনকাম ৩৫ হাজার টাকা।

আরেক ভাই, তার নাম কবির। কবির ভাই এর মাসিক বেতন ছিল ২৫ হাজার টাকা। নিম্নবিত্ত পরিবারে বেড়ে উঠেছেন। সংসারে টাকা পয়সার টানাটানি ছিল ছোটো থেকেই। উনি দ্বীনের জন্য কুরবানি করে এই জবটা ছেড়ে দিয়ে আর একটা জবে ঢুকলেন যেটার বেতন ১৮/২০ হাজার টাকা।

জাবের ভাই এখন ৩৫ হাজার টাকার বেতনে চাকরি করেন। আগে রিকশায় করে সব জায়গায় যেতেন। এখন হাঁটতে হয়। লোকাল বাসে ঝুলে ঝুলে অফিস করেন। আগে ঘন ঘন বাইরের খাবার খেতেন, রেস্টুরেন্ট এ যেতেন এখন ৬ মাসে হয়ত একবার যেতে পারেন। আগে দামি ব্র্যান্ডের কাপড় পরতেন, এখন নিউমার্কেট থেকে কেনা কাপড় পরেন। গরুর মাংস সপ্তাহে ১/২ বার না খেলে উনার ভালো লাগত না, এখন গরুর মাংস খুব কম খাওয়া হয়। পাংগাস, তেলাপিয়া মাছ খেয়ে দিন পার করেন। তবে এসবের চাইতেও বড় কথা আত্মীয় স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী বন্ধুরা যে স্ট্যাটাস মেইনটেইন করে চলে , সেই স্ট্যাটাস মেইনটেন করে চলতে পারেন না। অনেকেই কটু কথা বলে। তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে। সম্মান করে কথা বলে না। পাত্তায় দেয় না এক কথায়।

অন্যদিকে কবির ভাই এর সংসারে আরেকটু টানাটানি বেড়েছে । মাছ খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন। একটা ডিম দুভাগ করে খান। এরকম ছোটোখাটো কিছু এডজাস্টমেন্ট করে চালিয়ে নিচ্ছেন। পাড়া প্রতিবেশী আগের মতোই আছে। আগের মতোই ব্যবহার করে।

এখন আমরা বাইরের মানুষ। বাইরে থেকে জাবের ও কবির ভাই এর সংসার যাছাই বাছাই করতে গেলে তাদের স্যাক্রিফাইস যাছাই বাছাই করতে গেলে কী দেখব?

দেখব যে দ্বীনের জন্য কবির ভাই অনেক অনেক স্যাক্রিফাইস করেছেন। মাত্র ১৮/২০ হাজার টাকার চাকরি করছেন। উনার সংসারে খুবই টানাটানি। আর ঐদিকে জাবের ভাই উনার চাইতে কম স্যাক্রিফাইস করেছেন। উনি তো 30/35 হাজার টাকার চাকরি করেন। ভালোই মোটামুটি। একটা ডিম দুইভাগ করে তো আর খাওয়া লাগছে না।

কিন্তু আসলেই কী এমন?

আমিও জানি আপনিও জানেন- এমন নয়। কে তার লাইফস্টাইলের কতো টুকু অংশ স্যাক্রিফাইস করল- এটাই আসলে স্যাক্রিফাইসের মূল কথা, কুরবানির মূল কথা।

কারও কাছে অর্থনৈতিক টানাপোড়েন এর চাইতে দ্বীনের জন্য বাবা মা পরিবার থেকে দূরে থাকা বেশি কষ্টের। কারও কাছে এই দুইটির চাইতেও মানুষের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য সহ্য করা বেশি কষ্টের। শুধু অর্থনৈতিক বিষয়, ক্যারিয়ার ইত্যাদি দিয়ে বাইরে থেকে কুরবানী মাপতে যাওয়া অনেক বড় ভুল।

আমরা অনেকেই এই ভুল করে বসি। আমি নিজেও করি মাঝে মাঝে। অমুক ভাই তো অনেক স্যাক্রিফাইসের কথা বলেন, কিন্তু উনি ঠিকই তো ভালো চাকরি করেন, ভালো ইনকাম করেন- ওরা তোমাদের ব্রেইন ওয়াশ করছে, তোমাদের কাজে লাগাচ্ছে নিজেদের সুবিধার জন্য- এসব কথা মনে আসে। কিন্তু আমি কি জানি আমার স্ট্যান্ডার্ড থেকে আমি যেটাকে অনেক ভালো থাকা, ভালো ক্যারিয়ার মনে করছি সেটা সেই ভাইয়ের জন্য কতোটা কষ্টের। ভাই কতোটা কুরবানি দিয়ে এমন অবস্থা মেনে নিয়েছেন?

আল্লাহ আমাদের মুসলিম ভাইদের প্রতি সুধারণা রাখার তৌফিক দিক।

দ্বীনের জন্য প্রতিটি কুরবানি মূল্যবান । নিজ নিজ জায়গা থেকে প্রতিটি কুরবানিই কষ্টকর। জাবের ভাই কবির ভাই দুইজনেই কুরবানির কষ্ট স্বীকার করছেন। আল্লাহ দুইজনকেই উত্তম প্রতিদান দেবেন ইনশাআল্লাহ।