অনেক জায়গাতেই ক্যাম্পেইন করার বা লিফলেট বিতরণের অনুমতি পাওয়া যাবে না – এমন অভিযোগ অনেক ভাই করছেন। এটা একটা পর্যায় পর্যন্ত সত্য বলে মনে হয়। তবে পুরোপুরি সঠিক নয় বা সবক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এমন চিন্তা মূলত যেখান থেকে তৈরি হয়-

১। মাঠ পর্যায়ে কাজের অভিজ্ঞতা নেই।
২। ঢাকা-চট্টগ্রামের মতো মেট্রোপলিটন শহরে বা বড় বড় শহরের বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল কলেজ – যেগুলোতে সেকুল্যারিজমের জোরেসোরে চর্চা করা হয় শুধুমাত্র সেইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক চিন্তা ভাবনা করা।

২ নম্বর সমস্যাটা আসলে সামগ্রিকভাবেই বাংলাদেশে শুরু হওয়া বিগত দশকের ইসলামী জাগরণের সমস্যা। সামগ্রিক জাগরণ শহুরে উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত কেন্দ্রিক হয়েছে বলেই মনে হয়। গ্রাম সেখানে অনুপস্থিত। নিম্ন মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তের প্রবেশ সেখানে নেই বললেই চলে। আবার অঞ্চলভিত্তিক বিবেচণায় নিলে উত্তরবঙ্গ একেবারেই অবহেলিত হয়ে রয়েছে। তো এই হলো দুটি পয়েন্ট যার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা অন্য কোনো স্থানে সামাজিক অবক্ষয় সংক্রান্ত বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে ক্যাম্পেইনের অনুমতি পাওয়া নিয়ে সংশয় তৈরি হয়।

সমস্যার সমাধান ?


কিছু নিয়ম অনুসরণ করলে শহরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুমতি পাওয়া সম্ভব। সেগুলো নিয়ে পরে আলোচনা করা যাবে। তবে শুরুতে যা বোঝা দরকার-

১। শহর বাদ দেন। গ্রাম বা মফস্বলে যান। উত্তরবঙ্গে যান। গ্রাম বা মফস্বলের মানুষজন এখনো সাংস্কৃতিকভাবে অনেকটাই রক্ষণশীল। সামাজিক অবক্ষয়ের ইস্যুগুলো নিয়ে ক্যাম্পেইন করা তারা বেশ ইতিবাচক হিসেবে দেখে। অনুমতি পেতে সমস্যা হবে না ইনশা আল্লাহ।

২। টপিক, শব্দচয়ন ইত্যাদি নিয়ে পূর্বের পোস্টে আলোচনা করেছি। অনুমতি নেবার জন্য ঠান্ডা মাথায় ভেবে চিন্তে কথা বলতে হবে। প্রয়োজনে ফর্মাল আবেদন পত্র লেখা যেতে পারে। এসময় যা যা বলা যেতে পারে- তা একটা উদাহরণের মাধ্যমে বোঝানো যাক। ধরেন আপনি প্রেম নিয়ে ক্যাম্পেইন করতে চান কোনো এক স্কুলে। আপনি বোঝাবেন-

ক। বাংলাদেশে তরুণ তরুনীদের প্রেম , জেনা ব্যভিচার করার পরিসংখ্যান

খ। প্রেমের ফলে পড়াশোনা, ক্যারিয়ারের ক্ষতি, আত্মহত্যা, মাদকাসক্ত হয়ে পড়া, খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই ইত্যাদি অপরাধ করার কিছু ঘটনা, সংবাদপত্রের শিরোনাম, পরিসংখ্যান ইত্যাদি।

গ। আপনারা এলাকার সচেতন নাগরিক হিসেবে, ওদের বড়ভাই হিসেবে তরুণদের, সমাজকে রক্ষা করতে চান তাই ক্যাম্পেইন করতে চাচ্ছেন।

ক্যাম্পেইন চলাকালীন সময়ে শিক্ষকদের বক্তা হিসেবে রাখবেন, তাঁদেরকে সম্মান দেখাবেন, বিনয়ী হবেন, প্রয়োজনে তেল দেবেন – ইনশা আল্লাহ ক্যাম্পেইনে অনুমতি পাওয়া ব্যাপার না।

৩। হুট করে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে না গিয়ে আগে দেখেন সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আপনার/আপনাদের পরিচিত কেউ আছে কিনা। ফেইসবুকে পোস্ট দেন, আত্মীয় স্বজন,পাড়া প্রতিবেশীদের মধ্যে খোঁজেন, কোনো না কোনো লিংক খুঁজে বের করেন। এরপর তাদের মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যান।

৪। ৩ নম্বর পয়েন্টের সূত্র ধরেই বলি, আপনি আপনার নিজের স্কুল কলেজে যান। পরিচিত, প্রিয় স্যারদের সাথে কথা বলেন। সুবিধা পাবেন। এক স্কুলে করতে পারলে অন্য প্রতিষ্ঠানেও অনুমতি পাওয়া সহজ হবে।

৫। স্কুল, কলেজের তুলনায় প্রাইভেটি/কোচিং সেন্টারগুলোতে অনুমতি পাওয়া সহজ। আগে কিছু প্রাইভেট/কোচিং সেন্টারে কাজ করে নেন। এগুলো স্কুল/কলেজে অনুমতি নেবার সময় রেফারেন্স হিসেবে দেখাতে পারবেন- যে আমরা অমুক অমুক জায়গায় কাজ করেছি। এতে আপনাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে।

৬। যারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বা ভালো ভালো কলেজে পড়াশোনা করেন তাদের আমাদের সমাজে সেলিব্রেটি হিসেবে দেখা হয়। দূর আকাশের তারা তারা। আপনি নিজে এমন হলে বা আপনার পরিচিতদের মধ্যে কেউ এমন থাকলে এই সেলিব্রেটিজমকে কাজে লাগান। দেশের বাড়িতে মানে গ্রামে বা মফস্বলে বিভিন্ন ছুটিতে যাওয়া হয়। এই ছুটিগুলোতে স্কুল/কলেজ/কোচিং সেন্টার/খেলার মাঠ যেখানে সুযোগ পান- যান। আপনার সাথে কথা বলার জন্য তারা উন্মুখ হয়ে থাকবে। আপনি তাদের সন্তানদের, শিক্ষার্থীদের গাইড করবেন- এটা বললে অভিভাবক ও শিক্ষকরা অনেক খুশি হবেন। তাঁরা সানন্দে ক্যাম্পেইনের অনুমতি দেবেন ইনশা আল্লাহ।

৭। আপনি আগে কখনো ক্যাম্পেইন করেননি, এমন অবস্থা হলে শুরুতেই সেই বিশাল আকারে অডিটোরিয়াম ভাড়া করে ক্যাম্পেইন করব এমন চিন্তা মাথা থেকে বাদ দেন। প্রথমে ছোটো ছোটো কিছু ক্যাম্পেইন করেন। লিফলেট বিলান। কাজ করতে করতে আপনার প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা, ম্যাচুইউরিটি, লিংক, ফান্ড, জনবল হয়ে যাবে। এরপর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গেলে অনুমতি পাওয়া সহজ হবে ইনশা আল্লাহ।

এবার আসেন শহরাঞ্চলের ক্ষেত্রে কি করনীয়-

৮। স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কোর্সে প্রেজেন্টেশন দিতে হয়। টপিক ধরা বাঁধা থাকে না। বিশেষে করে স্লাইড বানানো যে কোর্সে শেখানো হয় (ICT, Computer 101 টাইপের বিভিন্ন কোর্স) এসব কোর্সে আপনি এই সামাজিক অবক্ষয়ের ইস্যুগুলোর উপর প্রেজেন্টেশন দেন। এক ঢিলে দুই পাখি মারা হবে। অন্যান্য কোর্সেও বা একাডেমিক পড়াশোনা, কো-কারিকুলার এক্টিভিটিস এর যেকোনো কাজে এমন সুযোগ পেলে কাজে লাগান।

৯। ২, ৩ এবং ৪ নং পয়েন্ট অনুসরণ করে কাজ করলে অনুমতি পাওয়ার কথা।

১০। যদি দেখেন যে অনুমতি পাবেন না, সম্ভাবনা নেই – তাহলে জোরাজুরি করা, পাওয়ার দেখিয়ে জোর করে ক্যাম্পেইন করা, হই হট্টগোল করার দরকার নেই। কইরেন না ক্যাম্পেইন। অন্য কোথাও করেন। আল্লাহর দুনিয়ায় জায়গার অভাব নেই

প্রত্যেকটা সমস্যার সমাধান আছে ভাই। আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে এসব সমাধান যদি বের হয় আপনারা সবাই মিলে চেষ্টা করলে প্রত্যেকটা সমস্যার এর চাইতে হাজারগুণ ভালো, ইফেক্টিভ সমাধান বের হবে ইনশা আল্লাহ। কাজে নামুন ভাই। সমস্যা যেমন আছে, তার সমাধানও আছে। আমাদের শুধু চেষ্টা করতে হবে লেগে থাকতে হবে।