Scarcity mentality নামের একটা টার্ম আছে। এর বাংলা অর্থ হলো “অভাব মানসিকতা”। এমন মানসিকতা থাকলে একজন মানুষ বা দল মনে করে অর্থ, সম্পদ, খ্যাতি এসব সীমিত। সবার জন্য পর্যাপ্ত নয়। একজন পেলে অন্যজন পাবেনা। মানে ধরুন ১০ জনের একদল মানুষ মনে করছে তাদের সামনে রাখা ঝুড়িতে ৮ টা কমলা আছে। কিন্তু আমরা মানুষতো ১০ জন এবং আমাদের সবারই কমলা লাগবে। এমন ক্ষেত্রে আর একজন পেলে আমি কমলা পাব না। কাজেই বুঝতেই পারছেন, মানুষ তখন আর ভাগাভাগি করতে চায় না, কেবল নিজের কথা ভাবে, কেবল নিজের ভাগ পেতে চায়, অসুস্থ প্রতিযোগিতা, মারামারি,গ্যাঞ্জাম, কূটকৌশল শুরু হয়ে যায়।
Scarcity mentality এর বিপরীত ধারণা হলো abundance mentality বা “প্রাচুর্যের মানসিকতা”, যেখানে মানুষ বিশ্বাস করে যে সম্পদ পর্যাপ্ত এবং সবার জন্যই সুযোগ রয়েছে। আগের উদাহরণের ১০ জন মানুষ ভাববে ঝুড়িতে অনেক কমলা আছে। আমরা সবাই অনেক অনেক কমলা পাব। কাজেই তাড়াহুড়া,মারামারি,গ্যাঞ্জাম, প্রতিযোগিতা করার দরকার নেই। আস্তে ধীরে নেই। কেউ অসুস্থ হলে, কমলা নিতে আস্তে না পারলে আমি নিজে তাঁর বাড়িতে গিয়ে কমলা দিয়ে আসব। দেখুন ভাই, রিযিকের মালিক একমাত্র আল্লাহ্। সফলতা দেবার মালিক একমাত্র আল্লাহ্। খ্যাতি, প্রশংসা বিজয়…এসবকিছুই আসে আল্লাহর কাছ থেকে। আমরা যদি এটা বিশ্বাস করি তাহলে কেন এটা মনে করি যে আল্লাহ্র স্টকে রিযিকের সংকট আছে, সফলতা, খ্যাতি, প্রশংসার সংকট আছে? অন্যরা সব ফ্যান, ফলোয়ার, সফলতা, বিজয় পেয়ে গেলে আমাদের দেবার মতো সফলতা বা বিজয় আর আল্লাহ্র কাছে থাকবে না? আমরা কেন মনে করি অন্যদের সাথে অসুস্থ প্রতিযোগিতা করে ফ্যান ফলোয়ার আমাদের দিকে নিয়ে আসতে হবে? সৎ কাজে আল্লাহ্ প্রতিযোগিতা করার নির্দেশ দিয়েছেন, কিন্তু তারমানে কি এটা যে আমি ষড়যন্ত্র করে, শত্রুদের সাথে হাতে মিলিয়ে অন্যদের কাজ থামিয়ে দেব যেন তারা আর সৎকাজ করতে না পারে? নাকি এমন যে অন্যরা যদি ১০ জন মানুষকে সাহায্য করে আমরা ১৫ জন মানুষকে সাহায্য করব? অন্যরা যদি ১০ টা ক্যাম্পেইন করে আমরা ১৫ টা ক্যাম্পেইন করব? অন্যদের কাজ থামিয়ে দিয়ে আমরা হয়ত তাদের চাইতে বেশীকাজ করতে পারব, আমরা জয়ী হব , ওদের হারাতে পারব। কিন্তু আসলেই কি তাই? এখানে কি আমরা সবাই মিলে হেরে যাছি না? অন্যদের ভালো কাজের প্রভাব থেকে সমাজের মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে না?ইসলাম কায়েমের কাজ পিছিয়ে যাচ্ছে না? আমরা কি আসলে ইসলামের জন্য কাজ করি? নাকি নিজের নফসকে , নিজের দলকে আল্লাহ্ বানিয়ে তাদের আনুগত্য করি? তার জন্য কাজ করি?
আমার চোখের সামনে একজন বোনের যদি ইজ্জত লুটে নেওয়া হলে আমি কি চিন্তা করতাম যে যারা ইজ্জত বাঁচাতে সাহায্য করছে তারা আমাদের দলের কেউ নাই, আমার দলের সুনাম হবে না, ওরা সুনাম নিয়ে নিবে তাই বোনের ইজ্জত বাঁচানোর দরকার নেই? আমরা কি আমাদের দলের জন্য আমাদের মাসলাক মানহাযের জন্য কাজ করি নাকি আল্লাহর জন্য কাজ করি? আমাদের মূল লক্ষ্য কি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা নয়?