অনলাইন কেন্দ্রিক বই পড়া, কোর্স, অডিও ভিজুয়াল কাজের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদে তরুণরা উৎসাহ ধরে রাখতে পারে না। সামাজিক শক্তি অর্জনের জন্য যে কর্মসূচীর প্রস্তাব করা হচ্ছে- সেগুলোতেও তরুণরা উৎসাহ উদ্দীপনা ধরে রাখতে পারবে কি? এমন প্রশ্ন চলে আসে অনেকেই মনেই। প্রশ্নের উত্তর দেবার আগে চলুন দেখা যাক তরুণরা কেন উৎসাহ উদ্দীপনা হারিয়ে ফেলে দ্রুত। তরুণদের বয়সের কারণে হরমোনাল কিছু ব্যাপার স্যাপার আসে। তাদের মধ্যে অস্থিরতা, নিত্ত নতুন বৈচিত্য খুঁজে বেড়াবে। এটা বয়সের ধর্ম। এটাতে আমাদের কোনো হাত নেই। তাদেরও কিছু করার নেই। কিন্তু যে বিষয়সমূহ নিয়ে আমরা কাজ করতে পারব তা হলো-
১। চিরন্তন লড়াই সম্পর্কে আমরা তরুণদের ধারণা দিতে পারিনি। দেখুন, আদম আলাইহিস সালাম সৃষ্টির পর থেকে শয়তানের সাথে বাবা আদমের লড়াই শুরু হলো। হক্ক ও বাতিলের এ লড়াই কিয়ামত পর্যন্ত চলবে। এ লড়াই শেষ হবে না কখনো। এখন আমাদের মনে ধারণা গেথে বসে যে অমুক সালের মধ্যে ইমাম মাহাদী আসবে, দাজ্জাল আসবে আর আমরা বিশ্বজয় করে ফেলব। হয়ত ২০২৪ সাল বা ২০২৮ সাল। এমন একটা ধারণা আছে। ২০১৩ সালের দিকে কিছু ভাইয়েরা এসব নিয়ে লেখালেখি করতেন। উনারা একদম ধরে ধরে বলতেন ২০১৮ সালে এই হবে ২০২২ সালে দাজ্জাল আসবে এমন। ২০২২ সালে তো দাজ্জাল আসলো না। এখন? ওই ভাইদের দাজ্জাল আর ইমাম মাহদী কেন্দ্রিক যে ফ্যান্টাসিগুলো ছিল সেগুলোর অবস্থা কী হবে? পিনাকি ভট্টাচার্য বাবু ডিসেম্বর মাসে ভিডিওর মাধ্যমে এমন হাইপ তুললেন যে ডিসেম্বরেই সরকারের পতন হবে। বললেন সরকার ২ মাস আছে আর। ডিসেম্বর, জানুয়ারি শেষে ফেব্রুয়ারি আসলো। কই সরকার তো পড়লো না। উনার ফ্যান ফলোয়ারের অনেকেই হতাশ হয়ে গিয়েছে। উনার কথার গুরুত্বও কমে গিয়েছে।
দাজ্জাল আসবে এই চিন্তাভাবনা করে যারা দ্বীন পালন করা শুরু করেছিল তাদের অনেকেরই অবস্থা খুব একটা সুবিধার না। এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক। এই নির্দিষ্ট দিন/বছর কেন্দ্রিক চিন্তা ভাবনা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। রাসূলুল্লাহ ﷺ কে একবার এক সাহাবী জিজ্ঞাসা করলেন ইয়া রাসূলুল্লাহ, কিয়ামত কবে হবে? রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, কিয়ামতের জন্য তোমার প্রস্তুতি কী? অন্য এক হাদীসে আছে কোনো মানুষ মারা গেলেই তার কিয়ামত শুরু হয়। যে কোনো সময় আমরা মারা যেতে পারি ভাই। তো কিয়ামতের জন্য আমাদের প্রস্তুতি কী? ভাই ও বোনেরা, এই বছর/নির্দিষ্ট কোনো ঘটনা/দিন কেন্দ্রিক পরিকল্পনা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। না হলে দিন এবং দুনিয়া কোনো ক্ষেত্রেই প্রোডাক্টিভ কিছু করা মুশকিল হয়ে পড়বে। সাহাবীরা এমন কোনো নির্দিষ্ট উপলক্ষ্যকে কেন্দ্র করে দ্বীন পালন করেননি। আল্লাহ তাঁদের উপর সন্তুষ্ট হোক। তাঁরা বুঝেছেন হক্ক বাতিলের লড়াই চিরন্তন। দাজ্জাল আসুক বা না আসুক তাঁদের এই লড়াই চালিয়ে যেতেই হবে।
২। আমাদের তরুণদের অনেকেই নৈরাশ্যবাদে ভোগে। অনেকেই চিন্তা করে আরে এইতো কিছুদিন পরেই অমুক সালে ইমাম মাহদী আসবে, দাজ্জাল হয়ে যাবে, সব ধ্বংস হয়ে যাবে, ব্যাংক কোলাপ্স করবে… এই লিফলেট বিতরণ, ক্যাম্পেইন এগুলো করে কি লাভ?
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বৃক্ষরোপন সংক্রান্ত একটি হাদীস আছে। হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন,
যদি নিশ্চিতভাবে জানো যে কিয়ামত এসে গেছে, তখন হাতে যদি একটি গাছের চারা থাকে, যা রোপণ করা যায়, তবে সেই চারাটি রোপণ করবে।
(বুখারি, আদাবুল মুফরাদ: ৪৭৯; মুসনাদে আহমাদ: ৩/ ১৮৩)
হাদীসটি নিয়ে গভীরভাবে ভাবা দরকার। কিয়ামত হয়ে যাচ্ছে। এসময় গাছের চারা রোপন করে লাভ কী? তারপরেও তিনি কেন গাছের চারা রোপন করতে বললেন? আলেমগণ বলেন এই হাদীস থেকে অবস্থা যেমনই হোক না কেন ভালো কাজ করে যাওয়ার উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। সুযোগ পেলেই আমরা যেন ভালো কাজ করি। তা যতোই ছোটো হোক না কেন। আমাদের অবস্থা যতোই খারাপ হোক না কেন, আমাদের হাতের কাছে থাকা যে কোনো উপাদান দিয়েই বা যেকোনো সুযোগ পাওয়া মাত্রই আমরা যেন তা ব্যবহার করে ভালো কাজ করি।
আর দাজ্জাল আসা, ইমাম মাহদী আসা এগুলো নিয়ে ১ নম্বর পয়েন্টেই আলোচনা করা হলো। ২০১৩ সালে যে তরুণ এই সামনেই দাজ্জাল আসবে, ২০১৮ সালে দাজ্জাল আসবে ভেবে কোনো কিছু না করে বসে ছিল ২০২৩ সালে এসে তার অবস্থার কথা চিন্তা করেন। আপনি ভাবছেন ২০২৪ সালে চুক্তি শেষ হয়ে যাবার পর তুরস্ক খেল দেখাবে ২০৩০ সালে দাজ্জাল আসবে- এসব ভেবে কিছু করছেন না। যদি না আসে তখন আপনি কী করবেন? সাহাবীরা কি এভাবে কাজ না করে বসে থাকতেন? রাসূলুল্লাহ ﷺ কি আমাদের এই শিক্ষা দিয়ে গেছেন?