সামাজিক শক্তি অর্জনের জন্য অফলাইনে দাওয়াতি কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হলো মসজিদের খুতবাহ। বাংলাদেশে হাজার হাজার মসজিদ আছে। শুক্রবারে অনিচ্ছা থাকলেও কমপক্ষে ১৫/২০ মিনিটের আলোচনা শুনতে হয় আগত মুসল্লীদের। তো এই খুতবাহতে সামাজিক শক্তি অর্জনের উপযোগী বিষয় সমূহ নিয়ে আলোচনা করলে অনেক ভালো ফলাফল আশা করা যায়। পাকিস্তানসহ পৃথিবীর বেশ কিছু দেশে এমন উদাহরণ দেখা গিয়েছে। তো এখানে একটা প্রশ্ন এসে যায় যে- খুতবাহতে কি আসলেই এধরণের বিষয়সমূহ নিয়ে আলোচনা করা সম্ভব কি না? অধিকাংশ মসজিদের কমিটি এগুলোর অনুমোদন দেবেন কিনা। পাশাপাশি তরুণদের লিফলেট বিতরণ,ক্যাম্পেইন করা এগুলোর কারণে কোনো সমস্যা হবে কিনা? এখন তো দাড়ি টুপি থাকলেই সমস্যা। তার উপর এভাবে লিফলেট বিতরণ!

প্রশ্নগুলো যৌক্তিক। তবে আমরা যদি কিছু কৌশল অবলম্বন করি তাহলে ইনশা আল্লাহ এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।

১। টপিক নির্বাচনঃ আলোচনার বিষয়বস্তু হতে হবে জীবনঘনিষ্ঠ সামাজিক ইস্যু। যেমন প্রেম, জেনা ব্যভিচার, পর্ণ, পরকীয়া, মোবাইল আসক্তি, হতাশা, আত্মহত্যা, প্যারেন্টিং, বৃদ্ধাশ্রম বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি জীবনঘনিষ্ঠ ইস্যু। এগুলো কোনো রাজনৈতিক ইস্যু নয়। এটা আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জামাত, চরমোনাই, হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃস্টান – সবার ইস্যু। সবার ঘরেই এই সমস্যা। সেকুল্যারিজম এই সমস্যার সমাধান দিতে ব্যর্থ। বরং তারাই এই সমস্যার কারণ।উপরোক্ত বিষয়সমূহে আলহামদুলিল্লাহ বাজারে অনেক বই রয়েছে। সেগুলো সংগ্রহ করে ধারাবাহিকভাবে অন্তত ১ বছর আলোচনা করতে পারলেও সেই এলাকায় খুবই ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যাবে ইনশা আল্লাহ। খতীব সাহেবও একটি সম্মানজনক মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হবেন। এলাকার তরুণ যুবক সম্প্রদায় প্রয়োজনে খতীবসাহেবদের এ ব্যাপারে তথ্য দিয়ে সাহায্য করবেন। লিফলেট বিতরণের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম। রাজনৈতিক ইস্যুতে লিফলেট বিতরণ করবেন না। সামাজিক ইস্যুতে বিতরণ করবেন।

২। উপস্থাপনার কৌশলঃ অমুকে অমুকের দালাল, অমুকে দেশ বেচে দিয়েছে, অমুকে তাগুত এধরণের শব্দচয়ন করলে সমস্যা হবার সম্ভাবনা আছে। তোমরা প্রেম করছ , মুক্তির কোনো উপায় নাই, ডিরেক্ট জাহান্নামে যাবা এধরণের শব্দ প্রয়োগ করা যাবে না। রাসূলুল্লাহ দাওয়াতে কঠোরতা অবলম্বন করতেন না। কঠোরতা অবলম্বন করতেন যে জায়গায় সে জায়গার নাম বললাম না। বুঝে নেন। দাওয়াতে তিনি কোমলতা ব্যবহার করতেন। তরুণ যুবক ভাইয়েরা এই বিষয়টি ভালোমতো লক্ষ্য করুন। আপনি দাওয়াতের কাজ করছেন। ওইটা নয়। লিফলেট বিতরণ করার দৃশ্য ভিডিও করে অনলাইনে দিলেন। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক হিসেবে দিলেন কোনো গরম নাশীদ। বাংলাদেশের একজন সাধারণ মানুষ এই নাশীদ আর লিফলেট বিতরণ দেখে কি ভাববে বলেন? সে তো ভয় পাবে। আপনাদের অন্যরকম ভাববে। এটা একদম স্বাভাবিক বিষয় ভাই। একবার দেখেছিলাম কিছু ভাইয়েরা ঈদ উপলক্ষ্যে খেলাধুলার আয়োজন করেছেন। দৌড়ঝাপের ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ডে গরম নাশীদ। এটা দেখে সাধারণ মানুষ যদি অমুক দলের ট্রেইনিং ভেবে নেয় তাহলে তো খুব বেশী অবাক হবার কিছু নেই। এই বিষয়গুলো বুঝতে হবে ভাই। ফ্যান্টাসি, রোমান্টিসিজম, তাড়াহুড়ো,অস্থিরতা এগুলো তারুণ্যের বৈশিষ্ট্য। এগুলো একেবারে দূর করা যাবে না। কিন্তু চেষ্টা করলে একদম কমিয়ে আনা সম্ভব যার ফলে কাজের কোনো ক্ষতি হবে না। উত্তেজিত না হয়ে, আন্তরিকতার সাথে, কল্যাণকামী হয়ে, দরদের সাথে সামাজিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে হবে। ইনশা আল্লাহ কোনো সমস্যা হবার কথা না।

৩। অনুমতি নিয়ে নেওয়াঃ মসজিদ, স্কুল কলেজ কোচিং সেন্টার এগুলোতে ক্যাম্পেইন করার আগে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। অনুমতি নেন। অনুমতি না দিলে অন্যস্থানে করেন। কাজ শুরু করলে ইনশা আল্লাহ আস্তে আস্তে সবাই অনুমতি দেবে।

৪। সবাইকে সঙ্গে রাখাঃ শুধু দাড়ি টুপিওয়ালারা মিলে ক্যাম্পেইন করবেন না। হুজুর, জেনারেল, এলাকার বড় ভাই,পাতি ভাই, ছোটো ভাই, মুরুব্বি, সিগারেটখোর, এলাকার রোমিও সবার কাছে সাহায্য চান। সমাজের সবাইকে সঙ্গে রাখেন। যেখানে দেখিবে ছাই উড়াইয়া দেখ তাই পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন- এই এপ্রোচে আগাতে হবে। এটা সমাজের সকলের সমস্যা। সকলে মিলে সমাধান করতে হবে।

৫। সামাজিক সংগঠণ/ক্লাবগুলোকে কাজে লাগানোঃ প্রত্যেক এলাকায় কিছু সমাজসেবামূলক সংগঠন থাকে। শীতবস্ত্র বিতরণ, ত্রাণ বিতরণ এই টাইপের কাজ করে। খেলাধুলার জন্য বিভিন্ন ক্লাব থাকে। ব্যায়াম করার জিম থাকে। এদের কাছে যান। পর্ণ, হস্তমৈথুন, মোবাইল আসক্তি নিয়ে এদের তুমুল আগ্রহ আছে । এদেরকে একটু ভালোমতো এপ্রোচ করতে পারলেই দেখবেন কাজ করার জন্য রাজি হয়ে যাচ্ছে। ক্যাম্পেইনে সহযোগী হচ্ছে।